দিব্যেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
পুর-নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় এক মাস। মনোনয়ন পর্বও এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করে ফেললেন কাঁথি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী এবং দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী। ৫৭ বছরের কাঁথি পুরসভার ইতিহাসে এই প্রথম কোনও প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেলেন।
গত পুর নির্বাচনে কাঁথির ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয় পেয়েছিলেন দিব্যেন্দুবাবু। কিন্তু চলতি পুর নির্বাচনে ওই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ান। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি, কংগ্রেস, নির্দল প্রার্থীদের মনোনয়নও জমা পড়েছিল। গত ২৫ মার্চ ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র পরীক্ষার দিন। আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরই মধ্যে, শুক্রবার একই সঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন তুলে নেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যান দিব্যেন্দুবাবু।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই সমবেত মনোনয়ন প্রতাহ্যার?
এক্ষেত্রে কেউ অজুহাত দিয়েছেন শারীরিক দুর্বলতার, আবার কেউ জানিয়েছেন, পরিবারের চাপে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আবার আর এক প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগটুকুও মেলেনি। তবে প্রতিটি দলের তরফেই মৌখিক অভিযোগ, তৃণমূলের চাপেই ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের দলের প্রার্থীরা। কিন্তু কোনও দলই এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেনি।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সুব্রত দাস। শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। কিন্তু কেন? এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের কাঁথি শহর কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ তেওয়ারির বক্তব্য, “সুব্রতবাবু একজন সবর্ক্ষণের কংগ্রেস কর্মী। পুরভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে বাড়ির লোকেদের আপত্তি ছিল। তাই হয়তো তিনি এ কাজ করেছেন।” অবশ্য সুব্রতবাবুর সাফাই, “কোনও প্রলোভন বা চাপ নয়। আমি স্বেচ্ছায় পদ প্রত্যাহার করেছি।” প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার কেকা দেব এ বার নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন দিব্যেন্দুবাবুর বিপক্ষে। বামফ্রন্টের দাবি ছিল, কেকাদেবী বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তিনিও এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। কেকাদেবী বলেন, “আমি এই ওয়ার্ডে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলাম। বাম প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। আর শরীরের যা অবস্থা, তাতে ভোটের জন্য ছোটাছুটি করতে পারব না। তাই প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিলাম।” সিপিএমের কাঁথি শহর পশ্চিম লোকাল কমিটির সম্পাদক নীলরতন সাউ জানান, “১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বামফ্রন্টেরর প্রার্থী না থাকায় আমরা কেকাদেবীকে সমর্থন জানিয়েছিলাম মাত্র। কিন্তু কেন তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন, তা উনিই বলতে পারবেন।” ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী উজ্জ্বলা সাউ ও এ দিন মনোনয়ন তুলে নেন। এমনকী এ দিন বাড়ি গিয়েও দেখা মেলেনি তাঁর। বিজেপির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ রায় বলেন, “উজ্জ্বলা সাউকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। পরে জানতে পারি, উনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।”
বিজেপির জেলা সভাপতি তপন করের অভিযোগ, “এ দিন দুপুরে আমাদের প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের লোকেরা। সেখানেই তাঁকে জোর করে প্রার্থীপদ প্রত্যহার করানো হয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, “১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের সমর্থনে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে বলে খবর। গতকাল রাত থেকেই দিব্যেন্দু ও শুভেন্দু অধিকারীর মদতে হুমকি দেওয়া হয়।” তাহলে পুলিশে অভিযোগ জানালেন না কেন? তাঁর উত্তর, “সরকারিভাবে ওই প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের কথা জানানো হলে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।”
তবে বিরোধীদের এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন অধিকারী পরিবারের কেউই। জয়ী দিব্যেন্দুবাবুর কথায়, “বিরোধীরাও মানেন, কাঁথি পুরশহর অনেক উন্নত ও পরিচ্ছন্ন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধীরা প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেছেন। আর তৃণমূলের নামে চাপের অভিযোগ তুলছেন।” একই সুর শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও। তিনি বলেন, “অভিযোগ ছাড়া এ সব কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।”
অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি জেলা তৃণমূল সভপতি শিশির অধিকারী। তাঁর কথায়, “সরকারিভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের খবর প্রকাশ না হওয়া পযর্ন্ত এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।”