Dengue

ভরা শীতেও ডেঙ্গির ভয় 

সবে নতুন বছরের শুরু। গরম এখনও বেশ কিছুটা দূরে। শীতেও ডেঙ্গির প্রকোপে চিন্তা বেড়েছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

নেমেছে পারদ। দাপট কমেনি ডেঙ্গির।

Advertisement

সবে নতুন বছরের শুরু। গরম এখনও বেশ কিছুটা দূরে। শীতেও ডেঙ্গির প্রকোপে চিন্তা বেড়েছে বিভিন্ন মহলে। জানা যাচ্ছে, গত পাঁচ মরসুমের মধ্যে গত মরসুমেই জেলায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই। সাধারণত, নভেম্বরে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শেষ হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, পরিস্থিতি দেখে গত ডিসেম্বরেও ওই সমীক্ষা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার স্বীকারোক্তি, ‘‘শীতেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ চলেছে। গত মরসুমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আক্রান্তরা প্রায় সকলেই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। সামান্য কয়েকজনই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জেলায় ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু হয়নি। ডেঙ্গি পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।’’ জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গিও বলেন, ‘‘জেলায় এই মুহূর্তে ডেঙ্গি পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে তার মানে এটা নয় যে আমরা আত্মতুষ্টিতে রয়েছি। বরং জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেকেই ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক রয়েছে।’’

উদ্বেগ অবশ্য সহজে কাটার নয়। জানা যাচ্ছে, বছরের শুরুতেই জেলার দু’জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন ডেবরার, একজন নারায়ণগড়ের। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে জেলায় যেখানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৮ জন, সেখানে ২০১৯ সালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭৮ জন। এক সূত্রের খবর, এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয় হয়েছে ৬০৪ জনের। বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয় হয়েছে ৩৭৪ জনের। ওই সূত্র জানাচ্ছে, গত মরসুমে যে ৯৭৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তারমধ্যে প্রায় দু’শোজনই আক্রান্ত হয়েছেন শীতে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে। নতুন করে কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গির প্রবণতা বেড়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই এলাকাগুলিতে সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মশার লার্ভা নিধন, জঞ্জাল সাফাই, বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, জেলার সাতটি পুরসভার মধ্যে গত মরসুমে সবথেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে খড়্গপুরেই, ১৩৭। মেদিনীপুরে ৫২ জন। ঘাটালে ৭ জন। অন্য দিকে, জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে সবথেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে ডেবরায়, ২১৫ জন। খড়্গপুর ১ ব্লকে ৪৭ জন, খড়্গপুর ২-এ ২৬ জন। জেলার স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশা শহরাঞ্চলে বেড়েছে। এই প্রজাতির মশা প্রবল শীত না পড়লে অল্প শীতেও বেঁচে থাকে এবং জীবনচক্র সম্পন্ন করে।

Advertisement

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, গত নভেম্বর, ডিসেম্বরেও ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল। তাঁর দাবি, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ নীচে নামছে। ফলে, ডেঙ্গি এ বার কমে যাবে। গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক ছিলই। গত মরসুমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁই ছুঁই হওয়ায় সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্মী মানছেন, ‘‘আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন বছরের গোড়া

থেকে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা শুরু না করা হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে।’’

তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ডেঙ্গির প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবানুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ ও তার কামড় থেকে বাঁচার উপরে। মশা নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক পদ্ধতি হল এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করা। ডেঙ্গির মশা সাধারণত স্থির ও পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির চারপাশে যাতে কোনও জায়গায় জল না জমে থাকে তা দেখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে ভাঙা পাত্র, নর্দমা বা ডোবাতে জল জমতে না দেওয়া ও পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। গোটা শরীর পোশাকে ঢেকে রাখা, ঘুমনোর সময়ে মশারি ব্যবহার করা আবশ্যিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement