ডেমুরিয়ায় জগন্নাথদেবের বিগ্রহ। ছবি: সোহম গুহ।
সব প্রস্তুতির অবসান। আজ পথে নামছে তিনশো বছরেরও বেশী প্রাচীন ডেমুরিয়ার রথ। রামনগর-২ ব্লকের মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডেমুরিয়ার রথযাত্রাই কাঁথি মহকুমা ও মহকুমার বাইরেও ডেমুরিয়ার রথ হিসেবেই পরিচিত। দশদিনব্যাপী আয়োজিত রথের মেলায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। সকলা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড়ে জমজমাট হয়ে থাকে গোটা রথমেলা প্রাঙ্গণ।
ডেমুরিয়া রথের মেলাকে নিয়ে নানা গল্প ছড়িয়ে রয়েছে কাঁথির মানুষের মধ্যে। তিনশো বছর আগে বর্তমান এগরা থানার বাসুদেবপুরের জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জায়গার উপর জগন্নাথদেবের মন্দির স্থাপন করা হয়। আর সেই বছর থেকে শুরু রথযাত্রাও। মৈতনা মেলা কমিটির সম্পাদক তমালতরু দাসমহাপাত্র জানান,জমি দানের আগেও ডেমুরিয়াতে জগন্নাথ দেবের মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। জগন্নাথদেবের বিগ্রহ ছাড়াও প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও ধনসম্পদও ছিল মন্দিরে। জগন্নাথ মন্দিরের সেই ধনসম্পদের লোভে মারাঠা দস্যু বা বর্গীরা বারবার মন্দিরের উপর আক্রমণ করে ধনসম্পদ লুঠ করে নিয়ে যায়। এমনকী বারবার বর্গীদের আক্রমনের ফলে জগন্নাথ দেবের মন্দিরটিও ধ্বংস হয়ে যায়। পরে রাজা লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জমির উপর মন্দির স্থাপন করা হয়।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মাঙ্গলিক আচার ও নিয়মানুসারেই ডেমুরিয়া জগন্নাথ মন্দিরের পূজার্চনা হয় বলে জানিয়েছেন মন্দিরের ট্রাস্টি কমিটির সভাপতি ও সেবাইত পরিবারের অন্যতম প্রবীন সদস্য চিত্তরঞ্জন চৌধুরী। জগন্নাথদেবের মন্দিরে প্রতিদিন নিয়মমতো দু’বেলা জগন্নাথ দেবের বিগ্রহের সামনে ভোগ নিবেদন করা হয়। আর প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি।
ডেমুরিয়া জগন্নাথ দেবের মন্দিরে প্রার্থনা করলে সেই মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। মেলা পরিচালনার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগে একটি পরিচালন সমিতিও গড়ে তোলা হয়েছে। ডেমুরিয়ার রথযাত্রা নিয়ে দিন কয়েক আগেই রামনগর-২ ব্লক অফিসে প্রস্তুতি সভাও হয়। বিডিও প্রীতম সাহা জানান, “দশদিনের রথযাত্রা মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দশদিনের মেলায় এ বার সাতদিন ধরে পুতুল নাচ, বাউল গান-সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও থাকছে।”