n পিছাবনিতে খালের উপরে পরিত্যক্ত লোহার সেতু। নিজস্ব চিত্র
১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশের সঙ্গে কাঁথিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আন্দোলনের ধার বাড়ছে দেখে ব্রিটিশ শাসকরা আন্দোলনকারীদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দিয়েছিল। কাঁথি-রামনগরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষ ব্রিটিশ শাসতের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে দ্দেশে বুক চিতিয়ে ঘোষণা করেছিল, ‘আমরা ‘পিছাব নি’। অর্থাৎ কিছুতেই আমরা পিছিয়ে যাব না, আন্দোলন চালিয়ে যাব। সেই ‘পিছাব নি’রই উত্তরসূরী আজকের পিছাবনি।
স্থানীয় মানুষজনের জেদ ও ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কট্টর মানসিকতার সম্মিলিত গর্জনের নাম ছিল পিছাব নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁথির পিছাবনির সেই গৌরবময় ইতিহাস এখন অনেকেই বিস্মৃত হতে বসেছে। নাম পিছাবনি হলেও আদতে জায়গাটির নাম নিমদাসবাড়। কিন্তু নিমদাসবাড় নামের সঙ্গে খুব কম সংখ্যক মানুষই পরিচিত। অন্যদিকে, খালটিও পিছাবনি খাল নামেই পরিচিত। ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল চিকিৎসক সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এলাকার মানুষ। ১১এপ্রিল ব্রিটিশ পুলিশ লবণ সত্যাগ্রহী সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঝাড়েশ্বর মাঝিকে গ্রেফতার করলে আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। এখানে লবণ সত্যাগ্রহীদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল লবণ সত্যাগ্রহ কেন্দ্র। পরবর্তীকালে আন্দোলনের স্মৃতিতে স্থানীয় মানুষজন পিছাবনি হাইস্কুলের সামনে লবণ সত্যাগ্রহ স্মারকস্তম্ভ গড়ে তোলেন।
আগে দিঘা-কাঁথি সড়কে পিছাবনি খালে নৌকাতেই পারাপার হতে। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ষাটের দশকে সেখানে লোহার সেতু তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে বয়সের ভারে লোহার সেতুটি জীর্ণ হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে নতুন সেতু তৈরি হয়। নামকরণ হয় লবণ সত্যাগ্রহ সেতু। কয়েক বছর আগেও পুরনো সেতুটিকে ফুটব্রিজ হিসেবে ব্যবহার করতেন স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু ভগ্নদশা সেতুটি বর্তমানে পরিত্যক্ত।
এলাকার বাসিন্দা ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষজনের দাবি, ‘‘ইতিহাসের স্বার্থে লোহার সেতুটিকে সংস্কার করে জনগণের যাতায়াতের উপযোগী করা হোক। পাশাপাশি পিছাবনির গৌরবময় ইতিহাসের সংরক্ষণে উদ্যোগী হোক সরকার।