ডেবরায় মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি ঘিরে মঙ্গলবার বীরসিংহ গ্রামে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিদ্যাসাগরের জন্মভিটের ধারেকাছে আসতে দেওয়া হয়নি গ্রামের মানুষকে। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান। তবে বুধবার ডেবরায় দেখা গেল অন্য ছবি। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বেরোনোর সময়ে নিজে থেকেই জনসংযোগ করতে দেখা গেল মমতাকে।
এ দিন ডেবরা অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কিছুটা এগোনোর পরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। তখন রাস্তার পাশে ভ্যানরিকশায় শুয়ে থাকা এক মহিলার দিকে এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। ডেবরার হরিপদ এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী সেনা নামে ওই মহিলার স্বামী প্রসেনজিৎ জানান, তাঁর স্ত্রীর শরীরের একাংশ অসাড়। দুই ছেলে মারা গিয়েছে। ছিটেবেড়ার ঘরে কোনওভাবে দিন গুজরান করার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাড়ি করে দেওয়ার আবেদন করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জেলাশাসক রশ্মি কমলকে দেখার নির্দেশ দেন। এরপর কয়েকজন বৃত্তিমূলক শিক্ষক এসে জানান যে তাঁরা দু’মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ওই শিক্ষকদের দুর্গাপুজোর পরে বাড়িতে আসতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক কিশোরী এসে জানায় কন্যাশ্রীর টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করে। সেটিও জেলাশাসককে দেখতে বলেন মমতা।
ডেবরা অডিটোরিয়ামের বাইরে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন তাঁদের কয়েকজনের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও বীরসিংহকে অবশ্য নিরাশ হতে হয়েছিল। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য মানপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন বীরসিংহের কয়েকজন বাসিন্দা। প্রশাসনিক স্তরে কথাবার্তা বলেই ছাপানো মানপত্র সুন্দর করে বাঁধিয়ে এনেছিলেন তাঁরা। সেই মানপত্র দেওয়ার জন্য বীরসিংহের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ৮৫ বছরের রামকৃষ্ণ ঘোষকে ভিআইপি কার্ডও দিয়েছিল প্রশাসন। বাঁধানো মানপত্র কাগজে মুড়ে সেই বৃদ্ধ যথাসময়ে সভামঞ্চের সামনে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আটকে সেটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে পারেননি তিনি। সেই মানপত্র তুলে দেওয়ার জন্য নিরাপত্তরক্ষীদের অনুরোধ করেন রঞ্জনা ঘোষ নামে বীরসিংহের আরেক বাসিন্দা। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে গিয়ে বারবার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। আমরা তো গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে শুধু মানপত্রই দিতে চেয়েছিলাম।’’ সেই মানপত্র মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছে দিতে চান তাঁরা।