এক সময় যে এলাকায় ছিল তাদের দাপট, বর্তমানে সেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলেই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বামেদের পার্টি অফিস। পরিস্থিতি এমন যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে দলীয় বৈঠক কোথায় হবে— সেই স্থান খুঁজতে হন্যে স্থানীয় নেতৃত্ব।
পূর্ব মেদিনীপুরের একমাত্র সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে রয়েছে। অভিযোগ, সেই এলাকা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোথাও তাদের পার্টি অফিস দখল করেছে বিজেপি, কোথাও তৃণমূলের কর্মীরা দফতর ভেঙে দিয়েছেন। আবার, কোনও কোনও ক্ষেত্রে পার্টি অফিস সংস্কারের অভাবে বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলির দরজায় তালা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী মোড়ে একটি পার্টি অফিস ছিল সিপিএমের । অভিযোগ, ২০১৬ সালে সেটি ভেঙে দেন শাসকদলের সমর্থকেরা। তারপর অফিসটি আর সারানো হয়নি। অথচ, ওই দফতর থেকেই পুরসভা লাগোয়া সুতাহাটা ব্লকের ভোট পরিচালনা করা হত। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এখানেই রণকৌশল ঠিক হয়েছিল। সে বছর ভোটে সাফল্যও পেয়েছিল তারা। দলীয় সূত্রে খবর, ওই পার্টি অফিস থেকে হোড়খালি, কুঁকড়াহাটি, চৈতন্যপুর-সহ অধিকাংশ অঞ্চলের নির্বাচন দেখাশোনা করা হত। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
একই দশা হলদিয়ার ক্ষুদিরামনগরের পার্টি অফিসের। এক সময় সিপিএমের ওই দফতর বর্তমানে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়। শুধু তাই নয়, এখানেই আপাতত থাকছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা লক্ষ্ণণ শেঠ। সিপিএমে’র অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে দফতরটি জোর করে দখল করে করেছে লক্ষ্ণণপন্থীরা। সিপিএমের দাবি, ওই দফতরটি হাতছাড়া হওয়ায় হলদিয়া ব্লকে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে তাদের।
দফতর দখল নিয়ে হতাশার সুর স্থানীয় বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘সব দফতর দখল হয়ে গিয়েছে। আমাকে বিধায়ক অফিস পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি।’’ সিপিএম কর্মীদের দাবি, নিজের বাড়িতে বসেই বিধায়ক কাজকর্ম করেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামলকুমার মাইতি বলেন, ‘‘২০১৬ বিধানসভা ভোটের পর মঞ্জুশ্রী পার্টি অফিস ভেঙ্গে দেয় তৃণমুলের লোকেরা। তারপর সারানো হয়নি। আর ক্ষুদিরামনগরে তো দফতল বিজেপি দখল করে নিয়েছে। এতে অসুবিধে তো হচ্ছেই।’’
সিপিএমের অভিযোগ মানতে নারাজ শাসকদল। তৃণমূল নেত্রী মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘সিপিএমের পার্টি অফিস জনরোষের শিকার হয়েছিল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা বিরোধীদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।’’
এত বাধার মধ্যেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে রাজি নন সিপিএমের নেতৃত্ব। তাঁরা জানিয়েছেন, হলদিয়া ব্লকে ভোট পরিচালনার জন্য ব্রজলালচকে আর সুতাহাটার জন্য চৈতন্যপুরে দু’টি পার্টি অফিস খোলা রয়েছে। আর গোটা জেলাতেও বন্ধ পার্টি অফিসের তালা খুলতে উদ্যোগী হচ্ছেন জেলা নেতৃত্ব।