দিলীপ ঘোষের সঙ্গে অসীম নন্দী। —নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফলের কারণ হিসেবে বারবার উঠে এসেছে রাম-বাম যোগের কথা। ধাক্কা খাওয়া জঙ্গলমহলে এবার বাম শিবিরের দাপুটে নেতা চলে গেলেন রাম শিবিরে। তবে শুধু বামেদের অন্দরেই নয়, ভাঙন ধরল ঘাসফুলেও।
রবিবার ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের নব নির্বাচিত সাংসদ দিলীপ ঘোষের সংবর্ধনা সভাটি কার্যত দলবদলের সভা হয়ে উঠল। এদিন ঝাড়গ্রাম শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন পাড়ায় বিজেপি-র নগর মণ্ডলের উদ্যোগে ওই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। সকাল এগারোটা নাগাদ গাড়ি থেকে কিছুটা পথ হাতে তরোয়াল নিয়ে পদযাত্রা করে সভাস্থলে এসে পৌঁছন দিলীপ। কয়েকদিন ধরেই শহরে গুঞ্জন ছিল সিপিএমের শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক অসীম নন্দী সপার্ষদ বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। সিপিএম নেতৃত্ব শনিবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে অসীমকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার রাতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। রবিবার সিপিএমের দলীয় মুখপত্রে অসীমকে বহিষ্কার করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তাতে পুলিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘গুরুতর দল বিরোধী কাজ ও শত্রুপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অসীমকে দলের গঠনতন্ত্রের ১৯ (১৩) ধারায় বহিষ্কার করা হয়েছে’।
একসময় অসীম ঝাড়গ্রামে দাপুটে নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। বাম আমলে কংগ্রেস ও তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে অসীমের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, মারধরের ২৬ টি মামলা রুজু হয়েছিল। ২৫ টি মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন অসীম। এখন মারধরের একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বছর পঞ্চান্নের অসীম সিপিএমের শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক এবং জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও সিটু-র জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি।
কেন বিজেপিতে গেলেন? অসীম বলেন, ‘‘তৃণমূলের দোসর মাওবাদীরা সিপিএমের ২৭০ জন কর্মীকে খুন করেছে। অথচ লোকসভা ভোটের পরে বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এটা জঙ্গলমহলের সিপিএম কর্মীদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বামের ‘ব’-তলায় ফুটকি দিয়ে আমরা সবাই রামে যোগ দিলাম।’’ এবার লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম শহরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টিতে বিজেপি-র লিড রয়েছে। এর পিছনে অসীম ও তাঁর অনুগামীদের হাত রয়েছে বলে জোর গুঞ্জন। অসীম অবশ্য জানাচ্ছেন, তৃণমূল আর বামেরা মানুষের বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলেছে। তাই শহরে এমন ভোটের ফল হয়েছে।
এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সিপিএম ও তৃণমূলের কয়েকশো কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূল ও সিটুর রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের থেকেও অনেকে যোগ দেন বিজেপিতে। এছাড়াও ঝাড়গ্রাম ট্যাক্সি ইউনিয়ন ও টোটো ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা-কর্মীও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সাঁকরাইলের রোহিনী গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সারথী সিংহ, ঝাড়গ্রামের রাধানগর গ্রাম পঞ্চয়েতের নির্দল সদস্য বুলবুলি কিস্কু, সাপধরা পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য বুলবুলি মণ্ডল, জামবনি ব্লকের কেন্দডাংরি পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য বিশ্বজিৎ মাহাতোর মতো অনেকে বিজেপিতে যোগ দেন।
জামবনির পড়িহাটি ও রোড চন্দ্রকোনার কয়েকশো সংখ্যালঘুও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সকলের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মীরা আমাদের দলে আসুন যোগ্য সম্মান পাবেন। সকলে তাই চলে আসছেন। তৃণমূল দলটাকে আমরা তুলে দেব। বাংলায় বিজেপিই শান্তি ফেরাবে।’’