ডেবরায় চলছে বামেদের প্রচার। — নিজস্ব চিত্র।
একসময়ে বামেদের শক্ত ঘাঁটি। তবে গত কয়েক বছরে সেখানে রক্তক্ষরণ বাড়ছিল। রাজনৈতিক মহলের দাবি, সেখানে বাম ভোটেই ভর করেই বেড়ে উঠছিল বিজেপি। তবে এ বার পরিস্থিতি বদলেছে ডেবরা ব্লকে। সেখানে পতপত করে উড়ছে লালঝাণ্ডা। গতবার না পারলেও এবার পঞ্চায়েত সমিতির সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। গতবারের তুলনায় এ বার তাঁদের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী সংখ্যাও বেশি।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল বলছে, ডেবরা ব্লকে এবার তাদের মূল লড়াই বামেদের সঙ্গেই। বামেদেরও দাবি, লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গেই। হাল ছাড়তে নারাজ বিজেপির পাল্টা দাবি, ভোট কাটাকাটির সুবিধা পেতে বামদের তোষণ করছে তৃণমূল।
এই ব্লকের ২৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ২৪২টি আসনে লড়াই করছে বামেরা। এর মধ্যে ৭টি আসনে লড়ছে সিপিআই। স্থানীয়স্তরে কোনও নির্দলের সঙ্গে জোট হয়নি বলেই দাবি করছেন বাম নেতারা। পঞ্চায়েত সমিতির ৪২ আসনের মধ্যে সিপিএম ৪০টিতে ও সিপিআই ২টিতে প্রার্থী দিয়েছে। চলছে নিবিড় বাড়ি-বাড়ি প্রচার, পাড়া বৈঠক, পথসভা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ ছাড়াও সৃজন ভট্টাচার্য, রবিন দেবরা আসছেন। ডেবরায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল নিয়ে চলছে জোর চর্চা।
এই আবহে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিবেক মুখোপাধ্যায় বলছেন, “গতবার বাম ভোট রামে চলে গিয়েছিল। আমাদের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল বিজেপির। তবে এ বার পরিস্থিতি একটু অন্যরকম। রাম থেকে নিজেদের ঘরে ফিরেছে বামেরা। আমাদের ধারণা এ বার আমাদের সঙ্গে বামেদের লড়াই হবে। আমরাই প্রথম হব। বিজেপি তৃতীয়স্থানে চলে যাবে।”
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডেবরা ব্লকে গেরুয়া ঝড়ে কাবু হলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ২৭টি আসন এসেছিল বামেদের হাতে। পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনও দখল করেছিল তারা। ডেবরার বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত অধিকারী বলেন, “গতবার আমাদের একটা অংশের ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল, এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এ বার আমরা সেই ভোট ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা গত বারের তুলনায় অধিক সংখ্যক প্রার্থী দিয়েছি। ডেবরায় স্বমহিমায় লাল ঝাণ্ডা দেখা যাচ্ছে। এই ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে আমরা এবার ক্ষমতায় আসব, এটা নিশ্চিত। আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হবে।”
বিজেপি অবশ্য মনে করছে, বিরোধী ভোট দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়ায় এই ব্লকে তৃণমূল সুবিধা পেয়ে যাবে। সেটি বুঝেই বামেদের জায়গা কিছুটা ছেড়ে রেখেছে রাজ্যের শাসক দল। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা ডেবরার বাসিন্দা তন্ময় দাস বলেন, “ডেবরায় গতবার আমরাও বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন পেয়েছিলাম। সে বার সিপিএমের লোকজন ভয়ে বেরোতে পারত না। কিন্তু এ বার তৃণমূলের মদতেই পুষ্ট হয়েছে বামেরা। তাই তাদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘এ বার তৃণমূলের টাকায় বহু আসনে মনোনয়নের ডিসিআর কেটেছে বাম প্রার্থীরা। তৃণমূল ভাবছে এই ভোট কাটাকুটির সুবিধা নেবে। কিন্তু আমরা এ বার ডেবরার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করব।”