প্রতীকী ছবি।
ত্রাসের নাম করোনা। এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসার যাবতীয় খুঁটিনাটি দেখভাল করতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হল মেদিনীপুরে। সূত্রের খবর, করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক রশ্মি কমলের পরামর্শে ওই বোর্ড গঠন করেছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু। এই ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড’- এর চেয়ারম্যান করা হয়েছে মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে। বোর্ডে রয়েছেন মেডিক্যালের অনান্য বিভাগের প্রধানেরাও।
মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু মানছেন, ‘‘একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’’ মেডিক্যালের এক সূত্র জানাচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে জন্যই এই পদক্ষেপ। মেডিক্যালের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনায় আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের নানা সংক্রমণে ভোগার আশঙ্কা থাকে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে একটা উদ্বেগ থাকেই। বিশেষ করে যাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের ফলে চিকিৎসায় সুবিধে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই বোর্ড রোগীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখতে পারবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিতে পারবে।’’ মেডিক্যালের ওই আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়েই মেডিক্যাল বোর্ড গড়েছেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ।
মেদিনীপুরে দু’টি করোনা হাসপাতাল চালু হয়েছে। খাসজঙ্গলের আয়ুষ হাসপাতালটি লেভেল-১ করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন কাশি, হাঁচি প্রভৃতি উপসর্গের রোগী, যাঁরা সন্দেহভাজন, কিন্তু করোনা নেগেটিভ। অন্য দিকে, মেদিনীপুরের মোহনপুরের গ্লোকাল হাসপাতালটি লেভেল- ২ করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো (সিভিয়র রেসপিরেটরি ইলনেস বা সারি) উপসর্গের রোগীরা। এঁরাও সন্দেহভাজন, কিন্তু করোনা নেগেটিভ। আর জেলার কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মেচগ্রামের বড়মা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ রয়েছে। পূর্বের ওই হাসপাতালটি লেভেল- ৩ এবং ৪ হিসেবে কাজ করছে।
ভাইরাস যুদ্ধে প্রস্তুত
• করোনা চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে মেডিক্যাল বোর্ড
• বোর্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যালের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা
• লেভেল ১-এর নিয়ন্ত্রণে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক
• লেভেল ২-এর নিয়ন্ত্রণে মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ
• করোনা হাসপাতালের জন্য খোলা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
• প্রাথমিকভাবে অ্যাকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে এক লক্ষ টাকা
• লেভেল ১-এ রোজ রাউন্ডে যাবেন মেডিক্যালের চিকিৎসক
• লেভেল ২-তে রাখতে হবে চিকিৎসকদের কলবুক
• হাসপাতালে সব সময় ১০২ পরিষেবার অ্যাম্বুল্যান্স
• গঠন হবে ফেসিলিটি লেভেল ম্যানেজমেন্ট কমিটিও
তথ্য সূত্র: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন
মেদিনীপুরের লেভেল-১ হাসপাতালটির ‘প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ’ থাকছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার হাতে। লেভেল-২ হাসপাতালটির ‘প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ’ থাকছে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর হাতে। দুই হাসপাতালের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্ট খোলা হবে যৌথ নামে। লেভেল- ১ এর ক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্যভবনের অ্যাকাউন্ট অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপারের নামে। লেভেল-২ এর ক্ষেত্রে মেডিক্যালের অ্যাকাউন্ট অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপারের নামে। দুই হাসপাতালের ক্ষেত্রেই কারা আসছেন, কারা যাচ্ছেন, সব তথ্য নথিভুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লেভেল-২ হাসপাতালের ক্ষেত্রে কলবুক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘সিভিয়র রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা সারি রোগী এলে সিনিয়র চিকিৎসককে ডেকে নিতে হবে। প্রয়োজনে ওই রোগীকে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে। দুই হাসপাতালের সামনেই একটি করে চারচাকার গাড়ি এবং দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে পোর্টেবল ভেন্টিলেটর থাকতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্সগুলি ১০২ পরিষেবার। চারচাকার গাড়ি দু’টি ডিএম- পুলের।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, দুই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের রোস্টার অনুযায়ী থাকতেই হবে। রোজই মেডিক্যালের এক চিকিৎসককে লেভেল-১ হাসপাতালে রাউন্ডে পাঠাতে হবে।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সন্দেহভাজনদের মেদিনীপুরে আনার জন্য জেলার কয়েকটি হাসপাতালেও ১০২ পরিষেবার অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে— সবং গ্রামীণ হাসপাতাল, গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল।