প্রতীকী ছবি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। রোজই বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। আর এই পরিস্থিতিতে জেলায় নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রতিষেধকের সঙ্কট। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিষেধক মজুত নেই জেলায়। এখনও পর্যন্ত যাঁরা প্রথম ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আবার ৮৪ শতাংশেরই দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া বাকি। সমস্যার কথা জেলা থেকে রাজ্যকেও জানানো হয়েছে। যেখানে জেলায় এখন এক-একদিনই ২০-২২ হাজার ডোজ় ব্যবহৃত হয়, শনিবার পর্যন্ত সেখানে জেলায় করোনা প্রতিষেধকের প্রায় ২৭ হাজার ডোজ় মজুত ছিল।
করোনা প্রতিষেধকের সঙ্কট নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল। তবে জেলার অন্য এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘প্রতিষেধকের ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিষেধক নেই। বিষয়টি রাজ্যকে জানানো হয়েছে।’’ তাঁর আশা, শীঘ্রই আরও প্রতিষেধক পৌঁছবে জেলায়।
করোনার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে টিকাকরণ কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধাদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছিল। ক্রমে ৬০ বয়সী ঊর্ধ্ব, ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব এবং কোমর্বিডিটি যুক্ত, ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব শহুরে নাগরিকদেরও প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আপাতত পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০,২৫,৭৬১ জনকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩,৩০,৩৯২ জনকে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ৫২,৯০৩ জন। এখনও দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া বাকি রয়েছে ২,৭৭,৪৮৯ জনের। প্রথম ডোজ়ের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কথা। আশঙ্কা এখানেই। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, ‘‘এই মুহূর্তে জেলায় যে সংখ্যক প্রতিষেধক রয়েছে তাতে আর দিন কয়েকই হয়তো টিকাকরণের কাজ চালানো যাবে। তারপর কী হবে জানি না!’’ অভিযোগ, কেন্দ্রের তরফে প্রতিষেধকের সরবরাহ অনিয়মিতভাবে হচ্ছে। কেন্দ্র অবশ্য ইতিমধ্যে জানিয়েছে, কোনও রাজ্যেই প্রতিষেধকের অভাব হবে না।
প্রশাসন সূত্রে খবর, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশকেই ইতিমধ্যে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ৬৬ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ়ও নিয়ে ফেলেছে। প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশকেই প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ৫৩ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ়ও নিয়ে ফেলেছে। তবে ৬০ বয়সী ঊর্ধ্ব, ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব এবং কোমর্বিডিটি যুক্ত, এমনকী ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব শহুরে নাগরিকদের প্রতিষেধক নেওয়ার হার ভাল নয়। অনেকেই প্রতিষেধক নিতে চাইছেন না। প্রশাসনের দাবি, সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। ৬০ বছর বয়সী ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশকে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব এবং কোমর্বিডিটি যুক্তদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ শতাংশকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব শহুরে নাগরিকদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ১৩ শতাংশকে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে এখনও পর্যন্ত।
জেলায় কোভিশিল্ডের ৩,৪২,৭১১ ডোজ় এসেছিল। শনিবার পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে ৩,২৮,৪০১ ডোজ়। কোভ্যাক্সিনের ৪৬,৫০৯ ডোজ় এসেছিল। ব্যবহৃত হয়েছে ৩২,৯২৯ ডোজ। জেলার ২৬টি টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে কোভ্যাক্সিনের আর একটি ডোজ়ও মজুত নেই। ৯টি কেন্দ্রে সামান্য মজুত রয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলিতে কোভিশিল্ডও মজুত রয়েছে অল্প পরিমাণে। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কোভিশিল্ডের কিছু ডোজ আনা হয়েছে। দু’-একদিনের মধ্যে সে মজুতও ফুরোবে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘প্রতিষেধক সরবরাহের গতি অত্যন্ত শ্লথ।’’