লকডাউনের আগে, সোমবার সকালে। ডান দিকে, লকডাউনের কয়েকঘণ্টা পরেও রাস্তায় বেরোল বাইক। মেদিনীপুর শহরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
সোমবার সকাল তখন এগারোটা।
মেদিনীপুর শহরে বটতলাচকের এক মুদি দোকানের সামনে তখন উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানি। অথচ অন্য দিনে এই সময়ে দোকানে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতাই থাকেন। কখনও কখনও ক্রেতা থাকেনই না।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে মেদিনীপুর শহর, ঘাটাল শহর ও খড়্গপুর শহর ও ঝাড়গ্রাম শহরে লকডাউন চালু হয়েছে। তার আগেই ওই চার শহরের বাজারে উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। বিকেলে লকডাউনের পরেও বেশ কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায় মানছেন, ‘‘সোমবার পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন অনেকে।’’ তিনি জানান, লকডাউন থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে। মুদি দোকান খোলাই থাকবে। তাও অনেকের আশঙ্কা যাচ্ছে না। এক শ্রেণির দোকানদার এই সুযোগে কালোবাজারি শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ। মেদিনীপুরের পুর-প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘বাজারে- দোকানে নজরদারি চালানো হচ্ছে। কেউ কালোবাজারি করার চেষ্টা করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন রেলশহর খড়্গপুরের রাস্তাতেও সকাল থেকে ভিড় দেখা গিয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পরেও শহরের রাস্তায় লোক ছিল। পুলিশের এক সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ গোলবাজারে প্রায় ৫ হাজার মানুষের ভিড় ছিল। বিকেল ৫টার পরেও আনুমানিক ২ হাজার লোক ছিল সেখানে। খরিদা, কৌশল্যা, ইন্দা, গেট বাজারেও এ দিন ভিড় উপচে পড়েছিল। কেউ কেউ একাই ২ বস্তা আলু কিনে নিয়ে গিয়েছেন। সন্ধ্যার পরেও হালকা ভিড় ছিল। পরে ধীরে ধীরে ফাঁকা হয় শহরের রাস্তা।
একই ছবি দেখা গিয়েছে ঘাটালে। এদিন ঘাটালের প্রগতি বাজার এবং কুঠিবাজারে টাটকা আনাজ সেভাবে আসেনি। দু’দিনের পুরানো ঝিঙে, পটলই দেদার বিক্রি হয়েছে। সেভাবে মাছও দেখা যায়নি। ঘাটাল শহরের একাধিক মুদি দোকানে ভিড় এড়াতে ক্রেতাদের পরস্পরের মধ্যে নির্দিষ্ট দুরত্ব রাখতে বলা হয়েছে। কিছু দোকান ফোনেও অর্ডার নিয়েছে। এখানে অবশ্য বেলা গড়াতেই অনেক মুদিখানা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘাটাল কলেজ মোড়ে কয়েকশো মানুষের জটলা ছিল। বিকালের দিকে কিছু দোকান খোলা থাকলেও ভিড় তেমন ছিল না। ঘাটালের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানান, একসঙ্গে সাতজনকে দেখলেই পুলিশ পদক্ষেপ করবে।
সকালে ভিড় ছিল ঝাড়গ্রাম শহরেও। আনাজ বাজারের দামও বেশ চড়া ছিল। আলু ১৫ টাকা কিলো থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা কিলো। পেঁয়াজ ৪০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, টমেটো ২০-৩০ টাকা, উচ্ছে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রেল মার্কেটের আনাজ ব্যবসায়ী পরিতোষ পাল বলেন, ‘‘এ দিন যা আনাজ এনেছিলাম সব শেষ হয়ে গিয়েছে। কাল কীভাবে আনাজ আসবে এখনও জানি না।’’ জুবিলি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাবলু রাউত জানান, এ দিন রুই, কাতলা, মৌরলা, শোল, চারা পোনা, ছোট চিংড়ি ছাড়া কোনও মাছ আসেনি। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘মুদি দোকানের সামগ্রী, আনাজ, দুধ, মাছ, জরুরি পরিষেবার সামগ্রী পরিবহণে সমস্যা হবে না। কারও কোনও সমস্যা হলে জেলা কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানান।’’
গড়বেতার তিনটি ব্লককে সরকারি ভাবে ‘লক ডাউন’ করা হয়নি। তবে সেখানেও গড়বেতা, রাধানগর, হুমগড়, আমলাশুলি, গোয়ালতোড়, পিংবনি, কিয়ামাচা, নয়াবসত, চন্দ্রকোনা রোড, ডাবচা, ধাদিকা, খড়কুশমা, সন্ধিপুর-সহ নানা এলাকার দোকানে ভিড় উপচে পড়েছিল। তবে দুপুর থেকেই রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়।
লকডাউনের পরেও মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শহরের কিছু দোকান ও চা দোকান খোলা ছিল সন্ধ্যায়। রাস্তায় ছিল বাইক। অনেকেই আড্ডা দিতে বেরিয়েছিলেন। পরে পুলিশ বেরিয়ে দোকান বন্ধ করে দেয়।