নিজস্ব চিত্র।
ধর্মীয় আবেগ বড়, না কি পরিবেশ?
বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার বিপজ্জনক পরিবর্তন নিয়ে গোটা বিশ্বের প্রবল উদ্বেগের প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে দিঘায় জগন্নাথের রথের মাসির বাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি করতে ৫৪০টি পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে প্রশাসন। আর তাতেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
এমনিতেই ঝাউবনের সারি কেটে সাফ করার মরিয়া প্রবণতায় সৈকত ক্রমশ রূপহীন, সবুজহারা। যে মহীরূহ রুখে দিতে পারে সমুদ্রের ভাঙন, তার গায়ে অনায়াসে করাত চালিয়ে সৈকতকে ভঙ্গুর বিপজ্জনক করা চলেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের তোয়াক্কা না করে গায়ে-গায়ে তৈরি হয়ে চলেছে হোটেলের সারি।
এখানেই থেমে না থেকে এ বার রথ চলার পথ করতে ৫৪০ মহীরূহ কেটে সাফ করার সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র ইতস্তত করেনি প্রশাসন। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার গাছ কাটার জন্য অনুমতি দিয়েছে বন দফতরও! এরপর গাছ কাটার বরাত দেওয়ার জন্য নিলাম ডাকা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে গাছ কাটা। দিঘায় নির্মিয়মান জগন্নাথ মন্দিরের উল্টোদিকে সামান্য এগিয়ে ২১ বর্গমিটার এলাকায় গাছ কাটা হবে। যদিও রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী গোলাম রব্বানির দাবি, তাঁকে এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। রব্বানি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি। এত গাছ কাটার সিদ্ধান্তের কথা জানি না। খোঁজ নিয়ে যা করার করব।’’
নিউ দিঘা রেল স্টেশনের ধারে যেখানে জগন্নাথ ধাম তৈরি হচ্ছে, সেখানেও বালিয়াড়ি কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘গাছ কাটতে বন দফতর অনুমতি দিতে পারে। তা বলে ইচ্ছে খুশি মতো কিছু করা যায় না। আমরা জাতীয় পরিবেশ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি জানিয়েছেন, আগামী বছর জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন হবে এবং প্রশাসনিক উদ্যোগে রথের চাকা গড়াবে। ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীদের কথায়, মন্দির তৈরি শেষ হতে এখনও ৪-৫ মাস সময় লাগবে, অথচ সেখান থেকে রথ যাওয়ার পথ করতে এখনই রাশি রাশি গাছ কাটা হবে! এটা কী করে সম্ভব!
বিতর্ক সামলাতে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এগজ়িকিউটিভ অফিসার তথা কাঁথির মহকুমাশাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘গাছ কাটার পাশাপাশি আমরা ১০৫৮টি নতুন গাছ লাগাব।’’ তবে পূর্ণবয়স্ক গাছের কার্যকারিতা কী ভাবে চারাগাছের সঙ্গে হতে পারে, সেই প্রশ্নে বিস্মিত পরিবেশকর্মীরা।
এ দিন নিউ দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দিরের কাজ পরিদর্শন করেন জেলাশাসক। বুধবার মন্দির নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা হিডকোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দিঘায় এসেছিল। তারাও মন্দির নির্মাণের কাজে গতি বৃদ্ধি করার নির্দেশ দেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
গাছ কাটার নালিশ
কাঁথি: কাঁথি-১ ব্লকের বিজেপি পরিচালিত হৈপুর পঞ্চায়েতে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার নালিশ উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে ওই ব্লকের কাঁচলাগাড়িয়া এবং দক্ষিণ চড়াইখিয়া গ্রামে ৬৫টি গাছ কাটা হয়েছে বলে দাবি। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার এলাকায় যান কাঁথি রেঞ্জ অফিসের কয়েকজন কর্মী। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অশোক সামন্তের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।