ফাইল চিত্র।
দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের আভাস মিলেছিল কয়েকমাস আগেই। রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের কর্মসূচি ও সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাচ্ছিলেন ক্রমাগত। পাশাপাশি তাঁর ও তাঁর অনুগামীদের দলহীন জনসংযোগ চলছিল। এই আবহে শনিবার নিজের খাসতালুক নন্দীগ্রামে গিয়ে শুভেন্দুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শাসকদলে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
শনিবার নন্দীগ্রামে অরাজনৈতিক মঞ্চে নিজের রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের কথা বলতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই শুভেন্দু তৃণমূলের নামোচ্চারণ পর্যন্ত করেননি, বলেননি জমি আন্দোলনের কথাও। উল্টে বলেছেন, ’’প্যারাশুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি।’’ দলীয় সূত্রের খবর, বিজয়া সম্মিলনীর ওই মঞ্চে নাম না করে তৃণমূলেরই একাংশ নেতৃত্বকে বিঁধেছেন শুভেন্দু। এই আবহেই তৃণমূলে ফাটলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠছে, ‘আমরা-ওরা’র বিভাজন করার চেষ্টা করছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
নন্দীগ্রামের ওই বিজয়া সম্মিলনীতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের ও প্রাক্তন সভাপতি বনশ্রী খাঁড়া-সহ শুভেন্দু অনুগামী নেতা-নেত্রীরা থাকলেও তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি শেখ সুফিয়ান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাস ছিলেন না। সুফিয়ান বলেন, ‘‘অরাজনৈতিকভাবে আয়োজন করা বিজয়া সম্মিলনীতে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তাই শুভেন্দুবাবুর অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই । তবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যে ভাবে অন্য নেতাদের আক্রমণ করেছেন, তাতে দলের নেতাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।’’ সুফিয়ান আরও বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল কংগ্রেস করি। আমরা দিদির অনুগামী। কেউ কেউ ‘দাদার অনুগামী’ নামে কর্মসূচি করছেন। এতে দলের মধ্যে বিভাজন হচ্ছে।’’ ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পরে নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে বিজয়া সম্মিলনীর হবে বলেও জানান তিনি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা দলের অঞ্চল সভাপতির মাধ্যমে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলাম। উনি আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে আসা এড়াতেই এমন কথা বলছেন। আর বিভাজনের চেষ্টার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
জমিরক্ষা আন্দোলনের ‘শহিদ দিবস’ স্মরণে আগামী ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের গোকুলনগর হাইস্কুল মাঠে জনসভার ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারেই ওই সমাবেশ হবে। এ ভাবে একের পর এক অরাজনৈতিক কর্মসূচির প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন অধিকারীদের ‘প্রতিপক্ষ’ বলে পরিচিত তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অখিল গিরি। অখিল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ও দলের পদে থেকে উনি সরকারের সমালোচনা করছেন। কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলছেন না। এমন সব মন্তব্য করছেন যাতে দলের নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। জেলা নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করছেন। দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতা থাকে তো দলের ও সরকারের পদ ছেড়ে কথা বলুন।’’
অখিল গিরির এ হেন অভিযোগ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘আমি ওঁর কথার কোনও উত্তর দেব না।’’