গড়বেতার রাস্তায় রামনবমী পালনে উদ্যাপন সমিতির বাইক র্যালির তোরণ। —নিজস্ব চিত্র।
রাম নিয়ে এতদিন লড়াই লাগত দুই ফুলে। গড়বেতায় এ বার ছবিটা অন্য। গেরুয়া শিবির রামে দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে বজরং দল। উল্টোদিকে অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রামধনু। যার পোশাকি নাম শ্রীরামনবমী উদ্যাপন সমিতি।
রামনবমীতে গড়বেতায় এবার বাইক র্যালির আয়োজন করছে দু'পক্ষ। পৃথকভাবে সেদিন বাইক র্যালি করবে গড়বেতা বজরং দল ও শ্রীরামনবমী উদ্যাপন সমিতি। দু'পক্ষই পৃথকভাবে রাস্তায় সুসজ্জিত তোরণ করেছে। গড়বেতার বিবেক মোড়ে 'ভারত মাতা কি জয়' লিখে তোরণ করেছে গড়বেতা বজরং দল, আর আমলাগোড়ায় স্বামী বিবেকানন্দের বাণী লিখে তোরণ করেছে শ্রীরামনবমী উদযাপন সমিতি। গড়বেতায় রামনবমী পালনে বাইক র্যালি ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে দুই শিবিরেই। সমাজমাধ্যমে এক পক্ষ অপরকে 'গদ্দার' বলছে, তো অপরপক্ষ অন্যপক্ষকে 'বহিরাগত' বলে পোস্ট করছে। যা নিয়ে ভোটের আগে শোরগোল পড়েছে গেরুয়া শিবিরে।
বজরং দলের তোরণ। —নিজস্ব চিত্র।
রামনবমীতে এতদিন একটিই বাইক র্যালির হত গড়বেতায়। সেখানে হিন্দুত্ববাদী একাধিক সংগঠনের সঙ্গে বহু সাধারণ ভক্তও শামিল হতেন। এ বার সেই র্যালির নিয়েই বিভাজন তৈরি হওয়ায় সাধারণ ভক্তদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গড়বেতায় বজরং দল রামনবমীতে আলাদাভাবে বাইক র্যালি করবে এ বার। সেদিন সকাল ৯ টা থেকে শুরু হবে র্যালি, গুঞ্জন হল ময়দান থেকে মায়তা পর্যন্ত যাবে সেই র্যালির। বজরং দলের পক্ষে প্রবীর দে বলেন, "গড়বেতায় একটাই র্যালি হত। তার আগে সবাই মিলে আলোচনা করেই র্যালির আয়োজন হত। এবার কোনও আলোচনা ছাড়াই চন্দ্রকোনা রোডের এক পক্ষ থেকে র্যালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চন্দ্রকোনা রোড থেকে গড়বেতা হয়ে আমলাগোড়া পর্যন্ত সেই র্যালি হবে বলে শুনছি। রাজনীতি করতে গিয়েই এটা করা হয়েছে। আমরা হিন্দু সংগঠন করি, রাজনীতির মধ্যে নেই। তাই আমরা গড়বেতায় রামনবমীতে যেমন র্যালি করি করব।"
অন্যদিকে গড়বেতার আমলাগোড়ার রাস্তায় সুসজ্জিত তোরণ করে রামনবমীর বাইক র্যালির প্রচার করছে শ্রীরামনবমী উদযাপন সমিতি। এই সমিতির পক্ষে চন্দ্রকোনা রোডের পারিজাত চক্রবর্তী বলেন, "আমরা হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, বজরং দল, হিন্দু সেবা সমিতি সবাই মিলে শ্রীরামনবমী উদ্যাপন সমিতি নাম দিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বাইক র্যালি করব। চন্দ্রকোনা রোড থেকে গড়বেতা হয়ে আমলাগোড়া পর্যন্ত এই র্যালি হবে। শুনেছি তৃণমূলের মদতপুষ্ট কয়েকজন স্বঘোষিত বজরং দলের নেতা আলাদা বাইক র্যালি করবেন।"
রামনবমী পালন নিয়ে দু'পক্ষের কাদা ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমেও। সমাজমাধ্যমে 'গদ্দার' বনাম 'বহিরাগত' বলে পোস্ট করে একে অপরকে বিঁধছে। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ছে গেরুয়া শিবিরও। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ লোধা বলেন, "রাম ও রামনবমী নিয়ে বিভাজন কাম্য নয়।" গড়বেতায় রামনবমী পালন নিয়ে বিভাজনের খোঁজ নিচ্ছে আরএসএস। সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা বলেন, "শ্রীরাম সবার, সবাই পালন করতে পারেন। তবে এনিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে বিভাজন ঠিক নয়, খোঁজ নিয়ে দেখছি।" বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জেলা সম্পাদক নীলকমল পাল বলেন, "এটা কোনও বিবাদ বা বিভাজন নয়, এটা সাংগঠনিক শক্তির ব্যাপ্তি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাতটি মূল কার্যক্রমের মধ্যে রামনবমী পালন অন্যতম। সেই পালন আমরা সবাই মিলেই করব।"
তৃণমূল বিধায়ক উত্তরা সিংহ বলেন, "শ্রীরাম সবার, রামনবমী প্রত্যেকেই পালন করেন। অনেক বাড়িতেও পালিত হয়। কিন্তু বিজেপির মতো রামকে নিয়ে কেউ রাজনীতি করে না।"