এতদিন কেবল কাঠের কাজ, মাদুর তৈরি, তসর, উল বোনা বা গামছা তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রশিক্ষণ। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে তফসিলি জনজাতির লোকজনকে এ বার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর।। প্রথমে ২৪০ জনকে ৬ মাসের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভাতা হিসাবে দেওয়া হবে এক হাজার টাকা। এই প্রশিক্ষণে বিপিএল তালিকাভুক্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণ পেতে হলে
• মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় পাশ করতে হবে
• বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে
• বিডিও অফিস, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে আবেদন জানানো যাবে
• ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা মিলবে এক হাজার টাকা
এই উদ্যোগে খুশি তফসিলিরা। ভারত জাকাত মাঝি মাডওয়া জুয়ান গাঁওতার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুর্মুর কথায়, “অনেক আগেই এই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। পরে হলেও শেষমেশ হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে যাতে আরও আধুনিক বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় সেই দাবি জানাব।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক সৌমেন্দু বিশ্বাস বলেন, “এখন গ্রামেগঞ্জেও কম্পিউটার, ইন্টারনেটের সুবিধে রয়েছে। বেকার যুবকেরা যাতে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু উপার্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।”
ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ কর্পোরেশনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্র চালু হয়েছিল জেলার বিভিন্ন জায়গায়। কেন্দ্রের নাম ‘ট্রেনিং কাম প্রোডাকশন সেন্টার (টিসিপিসি)। তফসিলি জনজাতি অধু্যুষিত বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রামের পাশাপাশি পিংলা, বেলদা ও মেদিনীপুর শহরেও ছিল কেন্দ্র। তবে কিছু দিনের মধ্যেই কর্মী সঙ্কট ও প্রশাসনিক উদাসীনতায় ঝুঁকতে শুরু করে কেন্দ্রগুলি। এই সব কেন্দ্রে একজন করে ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ ছাড়াও দু’জন করে কর্মী থাকার কথা। বিশেষজ্ঞদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। কিন্তু কর্মীরা অবসর নেওয়ার পরে আর নতুন নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে ৭টি কেন্দ্রে মাত্র এক জন ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ রয়েছেন। অন্য কোনও কর্মী নেই। ফলে এই কেন্দ্রগুলিও এ বার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। পরিবর্তে ঝাড়গ্রামে ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ কর্পোরেশনের রিজিওনাল ম্যানেজারের অফিসে একটি কেন্দ্র হচ্ছে। সেখানেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন মাত্র একটি জায়গায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলে দূর থেকে আসা যুবক-যুবতীদের তো অসুবিধা হবে?
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি এলাকায় আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। তাছাড়াও এই প্রশিক্ষণে সকলের উত্সাহ কতটা, তা প্রথমে দেখা প্রয়োজন। তেমন হলে ভবিষ্যতে ব্লকে ব্লকে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।