দিঘার সমুদ্র সৈকত। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘা। সেখানকার প্রায় সব হোটেল এবং লজেই বেআইনিভাবে মাটির তলী থেকে জল তোলা হচ্ছে। আগামী বছরের আগে ওই সব হোটেল এবং লজে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।
ওল্ড এবং নিউ দিঘা মিলিয়ে নথিভুক্ত হোটেল ৮৫০টি। তবে, ছোট, মাঝারি হোটেল-লজ মিলিয়ে সংখ্যাটা হাজার দুয়েকের গন্ডি ছাড়িয়েছে। প্রায় সব হোটেল-লজেই সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তোলা হচ্ছে। অনেক হোটেলে সুইমিং পুলেও একাধিক পাম্প রয়েছে। তা দিয়ে যথেচ্ছ তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের জল।
নিয়ম অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ জল তুলতে ডিএলজিডব্লিউআরডিএ (ডিস্ট্রিক্ট লেভেল গ্রাউন্ড ওয়াটার রিসোর্স ডেভলপমেন্ট অথরিটি)-র অনুমতি লাগে। হোটেল বা লজের ক্ষেত্রে দৈনিক কত জল লাগছে, তার হিসেবে মিটার বসানো হয়। তার জন্য টাকাও জমা দিতে হয়। কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, সিআরজ়েড-২ ও ৩ নম্বর এলাকায় হোটেল এবং লজ তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যের গ্রাউন্ড লেভেল অথরিটির ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র লাগে। সমুদ্রে জোয়ারের জল যতদূর পৌঁছয়, সেখান থেকে দু’শো মিটার পর্যন্ত মাটির নীচ থেকে জল তোলা যায় না। তবে দু’শো থেকে পাঁচশো মিটারের মধ্যে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর সম্মতি নিয়ে জল তোলা যায়। সে ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের উপর কোনও নির্মাণ হলে তার নীচ দিয়ে যাতে জলপ্রবাহ বিঘ্নিত না হয়, তা দেখা হয়।
দিঘায় ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্কট তৈরির আশঙ্কায় জাতীয় পরিবেশ আদালতে ২০২২ সালে মামলা করেছিলেন এক পরিবেশ প্রেমী। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের কোস্টাল জ়োন ম্যানেজমেন্ট অথরিটির প্রতিনিধি শ্রীমতি তৃপ্তি শাহের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তাঁরা ২০২৩ সালের ২১ অগস্ট সৈকত শহর পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেন। সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে বলা হয় মাটির তলার জল তোলার পদ্ধতি জনসাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে, আগামীতে হোটেল এবং লজগুলিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে উৎসাহ দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষকে।
রাজ্য সরকারের ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার অথরিটি’ ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, দিঘায় ছ’শো হোটেলের মধ্যে মাত্র ১২টিতে ভূগর্ভস্থ জল তোলার অনুমতি রয়েছে। এরপর জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে দিঘার সব হোটেলে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ চালু করতে হবে। বেআইনিভাবে যারা মাটির তলা থেকে জল তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করতে হবে। কী পদক্ষেপ নেওয়া হল তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষকে।
মামলাকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘গোটা সৈকত শহর কংক্রিটে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। মাটির নীচে বৃষ্টির জল প্রবেশ করতে পারছে না। জলের উৎস হ্রাস পাচ্ছে। একদিকে হোটেলগুলোকে পৃথক জলাধার তৈরি করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে হবে, তেমনই সমষ্টিগত উদ্যোগে পুকুর আর খাল খনন করে জল ধরে রাখতে হবে।’’ দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক অপূর্বকুমার বিশ্বাসের দাবি, ‘‘দু-একটি জায়গায় যারা পাম্প মেশিন বসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে।’’
যদিও পরিবেশ আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে কিছুই জানা নেই বলে দাবি সেখানকার হোটেল মালিকদের। দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের সহ-সভাপতি গিরিশচন্দ্র রাউত বলেন, ‘‘এই ধরনের নির্দেশের কথা প্রথম শুনলাম। জনসাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের উদ্যোগে সবেমাত্র পাইপলাইন পাতা চলছে।’’ হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি তথা পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুশান্ত পাত্রের বক্তব্য, ‘‘বৃষ্টির জল সংরক্ষণ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। ওই জলে খুব বেশি চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এ নিয়ে প্রশাসন আগেআলোচনাও করেনি।’’