Digha Jagannath Temple

জগন্নাথ ধামে সম্প্রীতির আবহ

সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তাঁর মুক্তির দাবিতে এপার বাংলায় প্রতিবাদ-মিছিল হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিঘা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র

পড়শি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পীড়নের অভিযোগে সরগরম রাজ্য এবং দেশের রাজনীতি। বাংলার সৈকতের পর্যটন কেন্দ্রে অবশ্য সম্প্রীতির ছবি। এ দেশের তথাকথিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ‘প্রতিনিধি’ শরিফুল, ইউনিস আর আইজুদ্দিনের হাতেই সেজে উঠেছে জগন্নাথ ধাম।

Advertisement

পুরির জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় তৈরি হচ্ছে মন্দির। বুধবার সেই মন্দিরের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন আগামী বছর ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে জগন্নাথ ধাম সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। রাজ্যের সংস্থা হিডকো ইতিমধ্যে মন্দিরের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে।আগামী এপ্রিলের আগে বাকি ১০ শতাংশ কাজ তাদের শেষ করতে হবে। মন্দিরের ভোগ ঘর, স্টোর রুম-সহ অধিকাংশ শেষ। এখন জগন্নাথ দেবের মূল মন্দিরের নির্মাণ কাজ চলছে। ওই মন্দিরে মার্বেলের কাজ করতে এসেছেন মিস্ত্রি শরিফুল শেখ। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা শরিফুল বলেন, ‘‘এ দিন মুখ্যমন্ত্রী কাজ দেখতে এসেছেন। সঙ্গে ছিলেন অনেক আধিকারিক। এ দিন কাজ কিছুটা ঢিমে তালে হচ্ছে। তবে আর তিন, চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’ আরেক মার্বেলের মিস্ত্রি ইউনিস শেখ বলেন, ‘‘মার্বেল কেটে তাতে নকশা করে মন্দিরের গায়ে বসাতে হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছি। কাজ শেষ করার তাড়া রয়েছে। এখন বাড়ি যাওয়ার সময় নেই।’’

সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তাঁর মুক্তির দাবিতে এপার বাংলায় প্রতিবাদ-মিছিল হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগও করছে গেরুয়া শিবির। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীতে। এই পরিস্থিতিতে দিঘায় হিন্দু ধর্মীয় স্থান তৈরিতে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যোগে সম্প্রীতির আবহ দেখছেন জেলাবাসী। শরিফুল আর ইউনিসের মত মার্বেলের কারিগরদের মধ্যেরয়েছেন শেখ আইজুদ্দিন। মুখ্যমন্ত্রীর জগন্নাথ ধাম পরিদর্শন করার আগে চরম ব্যস্ত সেই আইজুদ্দিন বলেন, ‘‘২৫ জন মার্বেল মিস্ত্রি কাজ করছেন। যাঁদের অধিকাংশই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।’’ সংখ্যা লঘুদের হাত ধরে জগন্নাথ ধাম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কেমন লাগছে? জানতে চাওয়াতে আইজুদ্দিন, শরিফুল আর ইউনিস তিনজনেরই জবাব, ‘‘সংখ্যা গরিষ্ঠদের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এপার বাংলায় বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দিয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই আমরা জগন্নাথ ধামের কাজে নিজেদের নিযুক্ত করতে পেরে ভালই লাগছে।’’

Advertisement

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মন্দির পরিদর্শনে ছিলেন ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি প্রসঙ্গে অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করছেন দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘‘স্থানভিত্তিক প্রত্যেক দেবতার আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে হয়েছে, তাই দিঘায় পুরীর মতো জগন্নাথ মন্দির তৈরি করে ফেললেন। এখানে সব কিছুই সম্ভব।’’ এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক পাল্টা বলছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেশের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ। তাঁর উদ্যোগে যে জগন্নাথ মন্দিরে সংখ্যালঘুরা কাজ করছেন, সেটাই বড় প্রমাণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement