নির্দেশই সার, জমি বেদখল চলছেই

তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়াতেই সরকারি জমি নতুন করে জবরদখল হওয়া আটকাতে কড়া নজরদারির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন তিনি।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

মেদিনীপুরে ব্লক অফিসের উল্টো দিকের জমি অরক্ষিতই। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।

তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়াতেই সরকারি জমি নতুন করে জবরদখল হওয়া আটকাতে কড়া নজরদারির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন তিনি। তারপরেও সরকারি জমি বেদখল হওয়া থামেনি। জমি দখল করে বাড়িও তৈরি হচ্ছে। তাই জেলায় সরকারি বিভিন্ন দফতরের যে সব জমি খালি পড়ে রয়েছে সেগুলি দ্রুত ঘিরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কাজ বিশেষ এগোয়নি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি, মেদিনীপুর, চন্দ্রকোনা রোডে খাসজমি বেদখল হওয়াই তার প্রমাণ। মাসখানেক আগেই সরকারি বিভিন্ন জমি ঘিরে ফেলার নির্দেশ এসেছে জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’একটি সরকারি দফতর জমি ঘেরার কাজ করলেও বেশিরভাগ দফতরই তা করে উঠতে পারেনি। ফলে, ফের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জমি বেদখল হওয়ার অভিযোগও রয়েছে ভুরি ভুরি। অভিযোগ, মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগর মাঠের একটি বড় অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি। চন্দ্রকোনা রোড স্টেশন লাগোয়া এলাকায় থাকা খাস জমিও দখল হয়েই চলেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

জমি বেদখল হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জায়গা খুঁজতেও কালঘাম ছুটছে প্রশাসনিক আধিকারিকদের। এক প্রশাসনিক আধিকারিকের কথায়, কিষাণ বাজার, খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের গুদাম, জলপ্রকল্প, বিদ্যুতের সাবস্টেশন তৈরির মতো অজস্র সরকারি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্প মঞ্জুর হয়ে যাচ্ছে। বরাদ্দ হয়ে যাচ্ছে টাকাও। কিন্তু যেখানে কাজটি হবে, সেখানে জমি পেতেই দেরি হচ্ছে। কোথাও আবার সরকারি জমি খুঁজে পাওয়া গেলেও দেখা যাচ্ছে, সেটি বেদখল হয়ে গিয়েছে।

এই একই ঘটনার জেরে মেদিনীপুর সদর ব্লকেও থমকে সরকারি প্রকল্পের কাজ। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কুইকোটায় ‘ক্যুইক রেসকিউ টিম’-এর ব্যারাক বানানোর জন্য ৬ ডেসিমেল জমি চিহ্নিত করে রেখেছিল। এখন কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ওই সরকারি জমিতে বাড়ি উঠছে। জমি বেদখলের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিডিও ঋত্বিক হাজরা। তিনি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিএলআরও-কে তদন্তও করতে বলেছি। কেউ সরকারি জমি বেদখল করলে মেনে নেওয়া হবে না। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”

শহরের অন্যতম বড় অরবিন্দনগর মাঠের জায়গা দখল করেও গড়ে উঠেছে বসতি। আগে থেকে এই মাঠ ঘিরে দিলে এমন সমস্যা হত না বলে মানছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ। বেদখল হওয়া আটকাতে মেদিনীপুরে পোল্ট্রি পুকুর ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর মদতেই এ সব ঘটছে। এ ব্যাপারে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ অন্যায়ভাবে সরকারি জমি দখল করতে পারবেন না। দলের সমস্ত নেতা-নেত্রীকেও সেই নির্দেশ মেনে চলতে হবে। যদি নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসে, তাহলে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

পোল্ট্রি পুকুর ঘেরা সম্ভব হলে বাকি জমিগুলি ঘিরতে এত সময় লাগছে কেন। জেলার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সবাইকেই কাজটি শেষ করে দ্রুত রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও বলেন, “সমস্ত দফতরকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন খালি পড়ে থাকা জমি ঘেরার ব্যবস্থা করেন। সেই
কাজ চলছেও।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement