উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
সাতসকালে আইনজীবীর চেম্বারে হাজির হয়েছিলেন তাঁর মক্কেল। মামলা নিয়েই শুরু হয় কথাবার্তা। ক্রমে তা কথা কাটাকাটিতে গড়ায়। বচসা চলাকালীন আচমকা ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করেন মক্কেল। সোজা তাক করেন চেম্বারে হাজির আইনজীবীর ছেলের দিকে। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন পড়শিরা। ভিড় জমে যায়। ধাক্কাধাক্কিতে পিস্তল পড়ে গেলে ব্যাগ থেকে ভোজালি বের করেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওই মক্কেল। মঙ্গলবার সকাল সওয়া ৯ টা নাগাদ সিনেমার টানটান দৃশ্যের মতো ঘটনাটি ঘটেছে শহর মেদিনীপুরে।
পুলিশ জানিয়েছে, আইনজীবী অশোককুমার মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর মক্কেল অনিল সিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনিলের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে। এ দিনই ধৃতকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ধৃতের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। এই মামলার সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব বলেন, ‘‘ধৃতের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থেই ধৃতকে হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ।’’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোক থাকেন শহরের বটতলাচকের কাছে। তাঁর ছেলে সুমনকুমার মণ্ডলও আইনজীবী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অনিলের আদি বাড়ি ঝাড়গ্রামের শিলদায়। এখন তিনি থাকতেন বীরভূমের বক্রেশ্বরে। মেদিনীপুর আদালতে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলার আইনজীবী ছিলেন অশোক। এখানে সেই মামলা মিটে গিয়েছে। এ দিন মামলার বিষয়ে কথা বলতেই অশোকের চেম্বারে এসেছিলেন অনিল। পরে সুমনও সেখানে আসেন।
অভিযোগ, কথা কাটাকাটির মধ্যে পিস্তল বের করে সুমনের মাথায় ঠেকান অনিল। সুমন পিস্তল ঠেলে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তখন অনিলের হাতে থাকা পিস্তল থেকে ম্যাগাজিন পড়ে যায়। পরে পিস্তলও পড়ে যায়। এরপর অনিল ব্যাগ থেকে ভোজালি বের করে সুমনকে কোপানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। আইনজীবীর ছেলের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। অনিলকে জাপটে ধরেন কয়েকজন। পুলিশ এসে অনিলকে গ্রেফতার করে। ধৃতের কাছ থেকে পিস্তল ও ভোজালি উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে পিস্তলের ম্যাগাজিনও।
সুমনের অভিযোগ, ‘‘ও খুনের ছক কষেই এসেছিল। না হলে ব্যাগে পিস্তল, ভোজালি থাকত না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে মাথায় ঠেকায়। পরে পালানোর চেষ্টা করে। পরিচিতরা চলে আসা সেটা হয়নি।’’
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃতের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে এল, তাঁর কাছে আরও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে কি না, সেই সব দিক দেখা হচ্ছে।