চিল্কিগড় জঙ্গল। —ফাইল চিত্র।
পর্যটকদের জন্য সরকারি ভাবে গাইড পরিষেবা চালু হচ্ছে চিল্কিগড়ে। ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রশাসনিকস্তরে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। এর ফলে এক দিকে যেমন পর্যটকদের সুবিধা হবে, তেমনই কাজের সুযোগ পাবেন স্থানীয়রা।
চিল্কিগড়ে গাইড পরিষেবা চালু করতে ইতিমধ্যে স্থানীয় ২০ জন যুবককে দু’সপ্তাহের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন জামবনি ব্লক প্রশাসন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। গাইডের ফি কত হবে, তাও নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। জামবনির বিডিও মহম্মদ আলম আনসারি বলছিলেন, “চিল্কিগড়ে এসে পর্যটকরা কনকদুর্গার ইতিহাস, জঙ্গলের দুষ্প্রাপ্য গাছপালা সম্পর্কে জানতে চান। গাইড না থাকায় অনেক তথ্যই তাঁরা জানতে পারতেন না। সেই ঘাটতি পূরণে গাইডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
চিল্কিগড়ের প্রধান আকর্ষণ জঙ্গলের মধ্যে কনকদুর্গার মন্দির। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে গাইডের কাছ থেকে কনকদুর্গার অজানা ইতিহাস, জঙ্গলের গাছগাছড়া সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে যাওয়া যাবে সহজেই। ইতিহাস বলছে, ১৭৪৯ সালের আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে জামবনি পরগনার সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গভীর জঙ্গলের মাঝে কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কনকদুর্গাকে নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। প্রথা মেনে দেবীকে রোজ নিবেদন করা হয় হাঁসের ডিম ও মাছের ভোগ। চিল্কিগড়ের ধবলদেব রাজ পরিবারের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছেন কুলদেবী কনকদুর্গা। মন্দির থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে রয়েছে প্রাচীন রাজবাড়ি।
মন্দির, রাজবাড়ির পাশাপাশি, ডুলুং নদী ও জঙ্গলের টানে বছরভর এখানে পর্যটক আসেন। গাইডদের তাই এমন ভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে যাতে পর্যটকদের যাবতীয় কৌতূহল তাঁরা মেটাতে পারেন। গাইডদের প্রশিক্ষণের জন্য গাছপালা, প্রকৃতি, ভূগোল, পর্যটন ও লোকসংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
পর্যটন সংস্থা ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “চিল্কিগড়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসেন গবেষক ও ছাত্রছাত্রীরাও। তাই গাইড থাকাটা খুব জরুরি।”
জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর চিল্কিগড় জঙ্গলে রয়েছে সাড়ে তিনশো প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছড়া, নানা প্রজাতির পতঙ্গ, পাখি, সরীসৃপ ও বন্যপ্রাণী।
এই জঙ্গলকে ‘বায়োডাইভারসিটি হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র্য পর্ষদ। ইতিমধ্যেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ ৭০ লক্ষ টাকায় জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে কনক অরণ্যের ৬১ একর জঙ্গল এলাকার চারপাশে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ লোহার তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হচ্ছে। কেবলমাত্র শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসা পড়ুয়া, গবেষক ও বিজ্ঞানীরাই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে পারবেন। আর পর্যটকরা জঙ্গলপথ দিয়ে যাওয়ার সময় উপভোগ করতে পারবেন কনক অরণ্যের সৌন্দর্য। জঙ্গল বাঁচাতেই এই উদ্যোগ।