নাবালিকা বিয়ে এবং ভ্রূণ হত্যা বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে। প্রতীকী চিত্র।
প্রতি বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে রাজ্যে অন্যতম সেরার তকমা পেয়ে আসছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। কিন্তু সম্প্রতি এই জেলায় নাবালিকা বিয়ে এবং ভ্রূণ হত্যা সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে তা প্রশাসনের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাবালিকা বিয়ে এবং ভ্রুণ হত্যায় রাজ্যের মধ্যে সামনের সারিতে চলে এসেছে পূর্ব মেদিনীপুর। ঘটনাটি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। সচেতনতা গড়ে তুলতে গোটা জেলা জুড়ে জোরদার প্রচারে নেমেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
নাবালিকা বিয়ে এবং ভ্রুণ হত্যায় জেলার ‘গ্রাফ’ যে ঊর্ধ্বমুখী তা স্বীকার করে নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় কিশোরী মায়ের সংখ্যা অনেক বেশি। এর ফলে ভ্রুণের মৃত্যুর হারও যথেষ্ট। একমাত্র সমাজ সচেতনতাই পারে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই জেলা জুড়েই সমস্ত স্কুল কলেজে শিবির করা হচ্ছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষায়। পাশাপাশি, নাবালিকাদের বিয়ে করার কুফল সম্পর্কেও লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। বিভাসের মতে, এই ‘রোগ’ নিয়ন্ত্রণ করা শুধু মাত্র স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নয়। এই সমস্যার মোকাবিলায় মেয়েদেরও এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, অভিভাবক থেকে শুরু করে মেয়েদেরও সজাগ হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তবে এর বাইরেও যে অন্যান্য সমস্যা রয়েছে সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিভাস। তাঁর মতে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোপনে যে ভাবে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে কিশোরী মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর কথা বলেছেন তিনি। এ নিয়েই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে বুধবার মহিষাদল গার্লস কলেজে আয়োজন করা হয় একটি শিবিরের।
প্রশাসনের দাবি, রাজ্য সরকার মেয়েদের স্কুলমুখী করতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে। এর জেরে স্কুলে মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহও বেড়েছে। ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এককালীন মোটা টাকাও দেওয়া হচ্ছে কন্যাশ্রীদের। কিন্তু তার পরেও গোপনে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর এ নিয়েই কপালে ভাঁজ প্রশাসনিক কর্তাদের। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের অমতে ভিন্ রাজ্যে পালিয়ে গিয়ে প্রণয়জনিত বিয়ে হচ্ছে কিশোরী অবস্থায়। কখনও বা পরিবারের লোকজনই মেয়েকে পাত্রস্থ করছেন তড়িঘড়ি। এ সব ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলেই প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা প্রশাসনিক আধিকারিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
এই রিপোর্ট পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন জেলার শীর্ষ আধিকারিকরাও। জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি জানিয়েছেন, বিষয়টি নজরে আসার পরেই কড়া হাতে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নাবালিকার বিয়ে দিতে গেলেই যাতে পাত্রী এবং পাত্রপক্ষের বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয় তার নির্দেশ দিয়েছি আমরা। শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কন্যাশ্রীরা স্কুলে আসা বন্ধ করলেই তাঁদের বাড়িতে খোঁজ নিতে। এ ছাড়াও কন্যাশ্রী ক্লাবকেও বন্ধুবান্ধবদের সন্দেহজনক গতিবিধির উপর নজর বাড়াতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতিটি ব্লক আধিকারিককেও এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ নাবালিকার বিয়ে দিতে চাইলে পরিবারগুলি কোন পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা-ও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।