Chhatradhar Mahato

সব মামলা প্রত্যাহার চান, নেত্রীকে ছত্রধর

মাওবাদী পর্বের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুললেন ছত্রধর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে করালেন, মামলামুক্তির আশ্বাস এক সময় তিনিই দিয়েছিলেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৬
Share:

ছত্রধর মাহাতো। —ফাইল চিত্র।

এনআইএ মামলা মুক্ত হয়ে ঘরে ফিরেছেন জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। তবে জঙ্গলমহলে তাঁর পুরনো সাথীরা পুরনো মামলায় জেরবার। এই আবহে মাওবাদী পর্বের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুললেন ছত্রধর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে করালেন, মামলামুক্তির আশ্বাস এক সময় তিনিই দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে কাজের জায়গা না পেলে আন্দোলনের বার্তাও দিয়েছেন ছত্রধর।

Advertisement

শনিবার ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের লোধাশুলির পথসাথী ভবনে ছত্রধরের সংবর্ধনাসভার আয়োজন করেছিলেন তাঁর পুরনো সঙ্গীরা। সেখানেই তাঁর বক্তব্য, “আমি দু’টি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি। আপনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে যৌথ বাহিনী দিল্লির ট্রেন ধরবে, আর নিরন্ন যে সব মানুষজনকে বাম সরকার মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে, প্রতিটি মামলা প্রত্যাহার করে তাঁদের সম্মান দেওয়া হবে। যে সভায় এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল না। যাঁরা এখানে রয়েছেন, তাঁরা জানেন সভাটি আমরা কী ভাবে লালগড়ে করিয়েছিলাম।” এরপর মমতার উদ্দেশে ছত্রধরের বার্তা, “তথাকথিত মাওবাদী হামলায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিজনের চাকরির ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু যাঁদের ভর করে আপনি ক্ষমতায় এলেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটা করুন। মামলাগুলি প্রত্যাহার করুন।”

ছত্রধর জানান, এক-এক জন ৪০-৫০টি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১০-১২টি আদালতে ছুটছেন। কী ভাবে তাঁরা মামলা চালাবেন, সেই ব্যবস্থাও করা উচিত। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মীদের সহায়তার জন্য ‘লিগ্যাল সেল’ চালুর সওয়াল করেন ছত্রধর। তাঁর কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে ১৫০০ স্পেশাল হোমগার্ড নেওয়া হয়েছে। আরও তিনশোর বেশি পুনর্বাসন পাননি অথচ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।”

Advertisement

ছত্রধরকে ‘জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র’ বলে উল্লেখ করে এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সাঁকরাইল, বেলপাহাড়ি, জামবনি ও ঝাড়গ্রাম ব্লকের শ’দুয়েক লোক ছিলেন। আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন ছত্রধরের পুরনো দিনের সঙ্গী তথা বর্তমানে তৃণমূলের লোকজন, চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী। হোমগার্ডের চাকরি পাওয়া কয়েক জনও ছিলেন। ছত্রধরের একাধিক পুরনো সঙ্গী জানান, একই মামলায় জেল খেটেও পুনর্বাসনের চাকরি জোটেনি। এক জন সভায় বলেন, “এখন জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের কর্মীরা দু’টি শ্রেণিভুক্ত। এক পক্ষ মামলা চালাতে গিয়ে ঘটিবাটি বেচছেন। আর এক পক্ষ সরকারি চাকরি পেয়ে সরকারের মাইনে পেয়ে মামলা চালাচ্ছেন। এই বৈষম্যের অবসান দরকার।”

ছত্রধরের আরও দাবি, “মানুষ এখনও বঞ্চনার মধ্যে রয়েছেন। ১৪ বছর শাসনকালে যদি এখনও কিছু মানুষ বঞ্চিত থাকেন, তাঁদের জন্য কাজ করার জায়গা যদি না পাই, তা হলে আমাকে জায়গা খুঁজে নিতে হবে। কী ভাবে অধিকার আদায়ে লড়াই করতে হয় জানি। ঘরে বসে থাকব, এটা হতে পারে না।”

বর্তমানে তৃণমূলে কোনও পদ নেই ছত্রধরের। ফলে, তিনি ঘুরিয়ে রাজনৈতিক বার্তাই দিতে চাইছেন বলে পর্যবেক্ষকদের অনুমান। ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর খোঁচা, “তৃণমূলের গোষ্ঠীবাজিতে ছত্রধরের অস্তিত্ব সঙ্কটে। নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এ সব বলছেন।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কের মতে, “উনি টের পাচ্ছেন কেমন সরকার চলছে।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, “উনি (ছত্রধর) যা বলেছেন, সেগুলি ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement