জনার্দনপুরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
আবাস যোজনার কাজকর্ম নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে অভিযোগ গিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে। তা যাচাইয়েই তাঁদের এই জেলায় আসা। বুধবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সেটা বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। খড়্গপুর ২ ব্লকে গিয়ে একশো দিনে টাকা না ঢোকা নিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখেও পড়লেন তাঁরা। সূত্রের খবর, সেই বিক্ষোভের পিছনে ছিল তৃণমূল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে পৌঁছেছিল দুই সদস্যের দলটি। ছিল গড়বেতার গনগনির গেস্ট হাউসে। সেখান থেকে বুধবার সকালে দলটি মেদিনীপুরে আসে। দেখা করে জেলাশাসক আয়েষা রানির সঙ্গে। কালেক্টরেটের সভাঘরে বৈঠকও করে। জানা গিয়েছে, সেখানে ‘আবাস প্লাসে’র এখনকার পরিস্থিতি জানতে চায় দলটি। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৬- ’১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত এ জেলায় আবাস যোজনায় প্রায় ১ লক্ষ সাড়ে ৫৩ হাজার বাড়ি তৈরি হয়েছে। আরও প্রায় ৮ হাজার ৩০০টি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। যাচাইপর্বের শেষে জেলায় অগ্রাধিকার উপভোক্তার তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকায় নাম রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার জনের। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় প্রায় এক লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। এঁদের রেজিস্ট্রেশন, জিও ট্যাগিং ইত্যাদি সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু ওই উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি অনুদানের অর্থ ঢোকার। এদিনের বৈঠক এবং সফর নিয়ে কিছু বলতে চাননি কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। কিছু বলতে চাননি জেলাশাসকও।
এদিন দুই সদস্যের দলটি খড়্গপুর- ২ ব্লকে যায়। প্রথমে পৌঁছয় লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। দেখতে চায় নানা ফাইল। এর পরে যায় ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের জনার্দনপুর গ্রামে। সেখানে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার আবাসে বাড়ি পায়নি বলে অভিযোগ। সুকুমার সিং, প্রসেনজিৎ সিং, বীরেন সিং-সহ প্রায় ১০জনের বাড়িতে যায় দলটি। সুকুমার বলেন, “আমাদের বাড়ির অবস্থা খারাপ। তাও আবাসে নাম এল না। সমীক্ষাই হয়নি। অথচ তৃণমূলের নেতাদের পরিবারের কারও আবাসে বাড়ি পেতে বাকি নেই। অনেকে একটার জায়গায় দু’টি বাড়ি পেয়েছে। এটাই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের জানিয়েছি।”
ওই পরিদর্শনের সময়ে একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। নেতৃত্বে ছিলেন যুব তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সূর্য ঘড়া। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আবাস যোজনার বাড়ি দেখতে এসেছেন ভাল কথা। কিন্তু একশো দিনের কাজ করেও গরিব মানুষ কেন টাকা থেকে বঞ্চিত হবে? সাধারণ মানুষ আমাদের নেতৃত্বকে ধরে প্রশ্ন করছেন। এর জবাব চেয়েই বিক্ষোভ দেখিয়েছি।” লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নান্টু দলুই দাবি করেন, “কেন্দ্রীয় দল বিজেপির ঘাটাল জেলা সভাপতির লেটার প্যাডে থাকা নামের তালিকা নিয়ে সমীক্ষা করতে এসেছে। অথচ আমাদের পঞ্চায়েতেই একশো দিনের কাজের ৩ কোটি টাকা বকেয়া। তাই টাকা না পাওয়া গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা কিছু বলতে চাননি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখিও হননি তাঁরা। এ দিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন খড়্গপুর ২ এর বিডিও সন্দীপ মিশ্র। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা যে তথ্য আমাদের কাছে চেয়েছেন আমরা দিয়েছি। যেখানে যেতে চেয়েছেন নিয়ে গিয়েছি। কিছু পরিবারের নাম আবাস প্লাসে আসেনি। সকলেই আবেদন করেছেন যাতে পুনরায় তাঁদের নাম সংযুক্ত করা যায়।”
জানা গিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় দলটি থাকতে পারে। যেতে পারে কেশপুর, সবং, গড়বেতা- ৩ প্রভৃতি ব্লকে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পরিদর্শনে কোথায় যাবে, সে ব্যাপারে দলটি আগাম কিছু জানাচ্ছে না।’’ এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও অব্যাহত। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের দাবি, ‘‘এখানে দুর্নীতি হয়েছে আবাস যোজনায়। দুর্নীতি হয়েছে বলেই কেন্দ্রীয় দল এসেছে।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির পাল্টা, ‘‘কেন্দ্রীয় দল এলে আমাদের কিছু এসে যায় না। কোথাও অস্বচ্ছতার কিছু নেই।’’