শেষ রবিবাসরীয় প্রচারে তারকায় টেক্কা তৃণমূলের

রেলশহরে শেষ রবিবাসরীয় পুর-প্রচারে তারকাদের হাজির করে তৃণমূল বাজিমাত করতে চাইল তৃণমূল। বিরোধীরা অবশ্য মেতে রইল ছোট সভা, বাড়ি বাড়ি জনস‌ংযোগ নিয়েই। খড়্গপুরের বিভিন্ন অংশে রবিবার সভা করেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ, বিধায়করা। এসেছিলেন দেব, সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায়। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের পদযাত্রাও হয়। বিজেপি আগে তারকা সমাবেশের কথা বললেও এ দিন অবশ্য জানিয়ে দেয়, নির্বাচনী প্রচারে তারকারা আসছে না বলেই এ দিন জানিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

ঝাড়েশ্বর মন্দির চত্বরে প্রচারে দেব।

রেলশহরে শেষ রবিবাসরীয় পুর-প্রচারে তারকাদের হাজির করে তৃণমূল বাজিমাত করতে চাইল তৃণমূল। বিরোধীরা অবশ্য মেতে রইল ছোট সভা, বাড়ি বাড়ি জনস‌ংযোগ নিয়েই। খড়্গপুরের বিভিন্ন অংশে রবিবার সভা করেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ, বিধায়করা। এসেছিলেন দেব, সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায়। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের পদযাত্রাও হয়। বিজেপি আগে তারকা সমাবেশের কথা বললেও এ দিন অবশ্য জানিয়ে দেয়, নির্বাচনী প্রচারে তারকারা আসছে না বলেই এ দিন জানিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

রবিবার সকালে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বাড়ি-বাড়ি প্রচারে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। পরে চড়া রোদে অবশ্য প্রচারের পারদ কিছুটা কমে। ফের বিকেল নামতেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে পথসভা হয়। পাঁচবেড়িয়ার ইদগাচক ও ইন্দার আনন্দনগরে দু’টি প্রচার সভায় যোগ দেন খড়্গপুরের মেদিনীপুর লোকসভার তৃণমূল সাংসদ অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। মুসলিম অধ্যুষিত পাঁচবেড়িয়া ও ভবানীপুরের অন্য দু’টি সভায় যোগ দেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ। সন্ধ্যায় প্রেমবাজারে আসেন তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কলকাতার নেতা দেবাশিস কোঙার এ দিন ঝুলির প্রচারসভায় যোগ দেন। বিকেলে খড়্গপুরের বারবেটিয়া থেকে কৌশল্যা, পুরাতনবাজার, বোগদা, হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ১০কিলোমিটার পদযাত্রার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। তাতে পা মেলান জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ঝাড়েশ্বর মন্দিরে তৃণমূলের প্রচারসভা। রাতে সেখানেই যোগ দেন ঘাটালের সাংসদ তথা সুপারস্টার দেব। পরে তালবাগিচা বাজারেও সভা করেন তিনি। দু’জায়গাতেই দেব বলেন, ‘‘আমি ভোট চাইতে আসিনি। সেটা আপনারা বিচার করে দেবেন। তবে চার বছরে আমাদের দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) অনেক উন্নয়ন করেছেন। সেটা মনে রাখবেন।’’ ‘মিনি ইন্ডিয়া’য় প্রচারে এসে হিন্দিতে কথা বলেন দেব। একই সঙ্গে জানান, এখন আর আগের মতো সাবলীল হিন্দি বলতে পারেন না। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘আমাদের দলে দেব, সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায়ের মতো যাঁরা সাংসদ-বিধায়ক রয়েছেন তাঁদের এনেছি। কারণ মানুষ ওঁদের চায়। তাই জনসংযোগ বাড়াতে আমরা রবিবারটি বেছে নিয়েছি।”

তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে সন্ধ্যা রায়ের সভা আনন্দনগরে।

Advertisement

পুর-নির্বাচনে প্রচারের প্রস্তুতি-পর্বে তারকা-সমাবেশের পরিকল্পনা শোনা গিয়েছিল বিজেপির নেতৃত্বের মুখেও। এমনকী তেলুগু ভোটারদের মন জয় করতে দক্ষিণী তারকাদের আনার কথা বলেছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি তিষার মুখোপাধ্যায়। বাবুল সুপ্রিয়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তারকাদের আনার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু শেষ রবিবারে তৃণমূল যখন দেব-দেবশ্রীর মতো একাধিক তারকা নিয়ে প্রচার সারল, তখন বিজেপির প্রচার রইল ম্লান। তুষারবাবু বলেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায় কাজে আটকে গিয়েছেন। আর অবাঙালিদের জন্য দক্ষিণী তারকা আনার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু জল-কলের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা তার অনুমতি দেননি। তাই পুরভোটের আগে আর তারকা না আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন বেশি করে মানুষের কাছে বাড়ি-বাড়ি প্রচার চলবে।’’ তবে কি শেষ রবিবারের প্রচারে তৃণমূলই বাজিমাত করল? একটু হেসে কটাক্ষের সুরে তুষারবাবুর জবাব, “তৃণমূলের তো মমতা থেকে দেব সবাই শিল্পী-তারকা। তাই ওঁদের তারকার সমাবেশের প্রয়োজন। আমরা খড়্গপুরে যে ভাবে লোকসভায় মানুষের মনে এগিয়ে ছিলাম, সে ভাবেই পুরসভায় বাজিমাত করব।’’ শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমরা সাংগঠনিক দিক থেকে যেমন অন্য দলের তুলনায় এগিয়ে, তেমনই প্রচারেও এগিয়ে। আর এই সব তারকাদের প্রচারে আনার পরিকল্পনা আগেই হয়েছিল।’’

প্রেমবাজারের সভায় বক্তব্য রাখছেন দেবশ্রী রায়।

এ বারের নির্বাচনে অবশ্য কখনও তারকা বক্তাকে হাজির করার কথা বলেনি কংগ্রেস ও বামেরা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শাকিল আহমেদ আসবেন বলা হয়েছিল। সিপিএমেরও মহম্মদ সেলিমদের মতো নেতাদের আনার কথা। কিন্তু শেষ রবিবারের প্রচারে তাঁরা না আসায় বাম-কংগ্রেসের প্রচার কিছুটা ঝিমিয়েই রইল। তবে বহু ওয়ার্ডে কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছেন। শহরের বিদ্যাসাগরপুর, খরিদা, নিমপুরা এলাকায় জেলা নেতা শম্ভু চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ রফিককে দিয়ে প্রচারসভা করেছে কংগ্রেস। বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘এই নির্বাচন পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির নয়, পুর-পরিষেবায় সাধারণ মানুষের রোজকার কান্না শোনার নির্বাচন। তৃণমূলের তারকাদের দেখে গরিব মানুষের চোখের জল মুছবে না। কারণ, সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের মতো তারকাদের সারা বছর দেখা যাবে না। তাই আমরা স্থানীয় নেতাদের ভরসা করছি।’’ বামেদের পক্ষ থেকে এ দিন নিমপুরা, ইন্দা-সহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করা হয়। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলেরও কটাক্ষে, ‘‘এটা খেটে খাওয়া মানুষের নির্বাচন। এখানে তারকা দিয়ে তৃণমূল ভিড় জমাতে পারে কিন্তু ভোট টানতে পারবে না।’’

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement