সপ্তাহ কয়েকের আগের ভারী বৃষ্টিতে বাড়ে কংসাবতীর জলস্তর। মেদিনীপুরের কাছে অ্যানিকেতে কংসাবতীর প্রাথমিক বিপদসীমা ২৫.৪৫ মিটার। সেই সীমা পেরিয়ে যায় জলস্তর। এখানে নতুন অ্যানিকেত তৈরি হলেও মূল খাল সংস্কার হয়নি। ফলে যে কোনও সময় জলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। আশঙ্কা, এর ফলে জল ঢুকে প্লাবিত হতে পারে বহু এলাকা।
মূল খালটি সংস্কারের দাবি বহু দিনের। এ বারে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হল সেচ দফতর। সূত্রের খবর, এর কাজে ব্যয় হতে পারে ১১৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। জেলার সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “নতুন অ্যানিকেত হয়েছে। তবে মূল খাল সংস্কার হয়নি। এই ক্যানাল সংস্কার না-হলে সমস্যা। সব দিক দেখে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।”
এর আগে জলের তোড়ে বাঁধ ভেঙেছে খড়্গপুর গ্রামীণ, ডেবরায়। বছর দুয়েক আগে বহু মানুষ জলবন্দি হন ডেবরায়। ক্যানাল সংস্কার না-হওয়ার ফলেই সেই পরিণতি হয়েছিল। সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “পরিকল্পনা মতো মেদিনীপুরের মূল ক্যানাল সংস্কার হলে এই এলাকায় বন্যার আশঙ্কা থাকবে না।”
মোহনপুরের কাছে কংসাবতী উপরে অ্যানিকেত বাঁধ তৈরি হয়েছিল ১৪৭ বছর আগে। ২০০৭ সালের বন্যায় এটি ভেঙে যায়। অ্যানিকেত ভাঙার মূল কারণ ছিল দু’টি। এক, কংসাবতী নদীর আশপাশ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা। এর ফলে ইটের তৈরি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের অ্যানিকেতের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। দুই, ২০০৬ সালে অ্যানিকেতের উপর সিমেন্টের আস্তরণ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে এটিই রাস্তায় পরিণত হয়। শুরু হয় মানুষের যাতায়াত। এমনকী চলতে শুরু করে বালি বোঝাই লরিও। জলের স্রোত সামলানোর ক্ষমতা থাকলেও উপরের এত চাপ সামলানোর ক্ষমতা ছিল না এই অ্যানিকেতের। কংসাবতীর এই অ্যানিকেতটি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি ব্লকের ৮০ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। মেদিনীপুর সদর, কেশপুর ও ডেবরা ব্লকের বন্যা প্রতিরোধও করা যায়। এ দিকে অ্যানিকেতে জল না-থাকলে অসময়ে সেচের জল পাবে না খড়্গপুর গ্রামীণ, ডেবরা, পিংলা ও পাঁশকুড়ার একাংশ। সেই পরিস্থিতি দেখেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, নতুন করেই তৈরি হবে অ্যানিকেত। পাশাপাশি ঠিক হয় যে পুরনো অ্যানিকেত রেখেই বানানো হবে নতুন অ্যানিকেত। সেই মতো কাজও হয়েছে। অ্যানিকেত তৈরির পাশাপাশি মেরামত করা হয়েছে স্টনিস গেটও। এই অ্যানিকেতের গা ঘেষেই চলে গিয়েছে ক্যানাল। মূল খাল সংস্কার হলে বন্যার আশঙ্কা আর থাকবে না? নির্মলবাবুর কথায়, “বৃষ্টি হলেও বন্যা হওয়ার কথা নয়। নদীর জল বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে বইলে অনেক সময়ই কিছুই করার থাকে না। সে ক্ষেত্রে আমরা অসহায়।”