বর্ষা নেমে গিয়েছে। এখনও শেষ হয়নি মেদিনীপুরে কংসাবতীর অ্যানিকেত বাঁধের কাজ। সেচ দফতরের এক সূত্রে খবর, কাজ শেষ হতে কমপক্ষে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। ফলে, এ বারও বর্ষায় মেদিনীপুরের একাংশে বন্যার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ওই সূত্রের দাবি, বৃষ্টিতে ব্যাহত হলে চলতি বছরের মধ্যেও অ্যানিকেতের কাজ শেষ নাও হতে পারে।
এক সময় ধীর গতিতে কাজ হওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘বড় প্রকল্প। ফলে, একটু বেশি সময় লাগবেই।’’ একই সঙ্গে তিনি মানছেন, ‘‘একটা সময় যে কাজ ধীর গতিতে হয়েছে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। তখন পর্যালোচনা বৈঠক করে দেখা যায়, অন্তত ২- ৩ মাস কাজ পিছিয়ে রয়েছে। এখন অবশ্য ওই পরিস্থিতি নেই।’’
গত বছরই অ্যানিকেত পরিদর্শনে এসেছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের অধীনস্থা সংস্থা কেন ধীর গতিতে কাজ করছে, তা নিয়ে অসন্তোষ চেপে রাখেননি সেচমন্ত্রী। পরে কলকাতায় এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেন তিনি। ঠিক ছিল, এ বার ভারী বর্ষার আগে অ্যানিকেতের কাজ শেষ হবে। এ জন্য কাজের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। এক-দু’টি শিফটের বদলে তিনটি শিফটে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
মেদিনীপুর শহরের পাশে মোহনপুরের কাছে কংসাবতী নদীর উপরে এই অ্যানিকেত বাঁধ তৈরি হয়েছিল ১৪৫ বছর আগে। জলপথে ব্যবসা, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও পানীয়-নিত্য প্রয়োজনীয় জলের যোগান এবং বন্যা প্রতিরোধের কথা ভেবেই ইংরেজরা এই বাঁধ তৈরি করেছিল। বছর আটেক আগে, ২০০৭ সালের বন্যায় এটি ভেঙে যায়। এর আগে বহু জলের স্রোত সামলেছে এই অ্যানিকেত। বহু বন্যা প্রতিরোধ করেছে। ভেঙে যাওয়ার পর কয়েকবার সংস্কার হয়েছে। তবে পরে আবারও ভেঙেছে। সেচ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, অ্যানিকেত ভাঙার প্রধানত দু’টি কারণ রয়েছে। ১) কংসাবতী নদীর আশপাশ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা। বালি তুলতে তুলতে তা একেবারে অ্যানিকেতের কাছে এসে পৌঁছে গিয়েছিল এক সময়। ফলে, ইটের তৈরি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের অ্যানিকেতের ভিত আর মজবুত ছিল না। ২) ২০০৬ সালে অ্যানিকেতের উপর সিমেন্টের আস্তরণ তৈরি করা হয়। পরবর্তীকালে এটি রাস্তায় পরিণত হয়। মানুষজন তো বটেই, বালি বোঝাই লরিও চলতে শুরু করে। সব মিলিয়ে, জলের স্রোত সামলানোর ক্ষমতা থাকলেও উপরের এত চাপ সামলানোর ক্ষমতা ছিল না এই অ্যানিকেতের।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, ২০০৭ সালের বন্যায় ৯১.৪৪ মিটারের লো ওয়্যারটি পুরোপুরি নষ্ট হয়। অন্য দিকে, হাই ওয়্যারের প্রায় ১৫০ মিটার ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ হয়। ২০০৮ সালের বন্যায় আবারও ৩৫ মিটার অংশ ভাঙে। ফের ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করতে হয়। পরিস্থিতি দেখে আর সংস্কার নয়, নতুন করে অ্যানিকেত তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়, পুরনো অ্যানিকেত রেখেই নতুন অ্যানিকেত তৈরি হবে।
দু’দফায় নতুন অ্যানিকেত তৈরি করা হবে। তার সঙ্গেই মেরামত করা হবে ভেঙে যাওয়া স্টনিস গেট। সেই মতো কাজও শুরু হয়। এ বার অ্যানিকেতটি তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে। যার নাম শিট পাইল। স্টিলের পাত দিয়ে দু’দিক ঘেরা রয়েছে। আর তার উপরে সিমেন্টের গাঁথনি হয়েছে। ফলে শুধু পাথর থাকলে যেমন সামান্য পরিমাণ জল বেরিয়ে যেত এবং অ্যানিকেত ক্ষতিগ্রস্ত হত, এর ফলে সেই ঘটনা ঘটবে না। ভাঙারও সম্ভাবনা থাকবে না। সেচ দফতর সূত্রে খবর, অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে এই অ্যানিকেত তৈরির জন্য বরাদ্দ হয় ১০৪ কোটি টাকা।