ব্রয়লার বর্জ্যে বিপদ

শীত শেষের মুখে। এখনও কমেনি মুরগির দাম। কেন কমছে না দাম? চাহিদা-জোগানের সরল অর্থনীতি? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু? কী ভাবে চাষ হয়? কতটা দাম পান চাষিরা? সব জায়গায় নিয়ম মেনে চাষ হচ্ছে কি? পরিবেশে কোনও প্রভাব পড়ছে না তো? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।এমনকি, সুযোগ বুঝে ফেলে যাওয়া হচ্ছে মরা মুরগিও। শহর-শহরতলি অথবা গ্রামগঞ্জে একটু হাঁটলে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। ভুক্তভোগীদের আর্জি, মাংস উৎপাদন বাড়ুক। কিন্তু পরিবেশ দূষিত করে নয়।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
Share:

মুরগির পালক জমে এ ভাবেই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

উৎপাদন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণও। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্রয়লার মুরগির পালক। বদ্ধ জলাশয় বা পরিত্যক্ত জায়গায় ডাঁই করা রয়েছে মুরগির মল, মূত্র। এমনকি, সুযোগ বুঝে ফেলে যাওয়া হচ্ছে মরা মুরগিও। শহর-শহরতলি অথবা গ্রামগঞ্জে একটু হাঁটলে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। ভুক্তভোগীদের আর্জি, মাংস উৎপাদন বাড়ুক। কিন্তু পরিবেশ দূষিত করে নয়।

Advertisement

নিয়ম হল, মরা মুরগি কিংবা মল সহ নোংরাগুলি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মাঝে মাঝে নয়। নিয়মিত ভাবেই দূষিত পদার্থ গুলি পোড়াতে হবে। অথবা গভীর গর্তে জমা রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, বাতাসে পালক, শুকনো মল যাতে রাস্তায় না ওড়ে। এ ছাড়াও মুরগি ফার্মের বর্জ্যগুলি চুন দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নেওয়ার নিয়ম। নিয়মিত ভাবে এটা করা হলে দুর্গন্ধ কম ছড়াবে।

কিন্তু অভিযোগ, জেলার অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সব নিয়ম মানা হয় না। ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ।

Advertisement

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর জানাচ্ছে, ৫০০০ পর্যন্ত মুরগি চাষ করলে দফতরের বা পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র লাগে না। এর ফাঁক গলে দূষণ রোধে বেরিয়ে যাচ্ছে পোলট্টি ফার্ম গুলি। এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত অথবা পুরসভা ফার্ম মালিকদের সতর্ক না করায় কিংবা লাগাতার অভিযান না করায় ক্ষোভ ছড়াচ্ছে গ্রামে-গঞ্জে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘‘সচেতনতা বাড়াতে প্রচার জরুরি। মরা মুরগি, পালক পুড়িয়ে ফেলানোর অভ্যাস শুরুতে নজর বাড়ানো হোক।” প্রাণী সম্পদ দফতরের উপ-অধিকর্তা তুষার কান্তি সামন্ত বললেন, “মরা মুরগি, পালক কিম্বা মল নির্দিষ্ট জায়গায় জমা কিংবা ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে দিতে হবে। ফার্ম মালিকদের নিয়ে দ্রুতই একটি বৈঠক করব।”

প্রাণী সম্পদ দফতর সূত্রের খবর, দেশি মুরগির মতো ব্রয়লাদেরও (মাংসের জন্য মুরগি) রানিখেত, আই বি ডি (মুরগির এডস), প্লেগ, সি আর ডি, ব্রঙ্কোট্রাইটিস রোগ হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে তাই প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। তাতে ব্রয়লারের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। মুরগির স্বাদ ঠিক থাকে। পরিবেশও রক্ষা পায়। ব্রয়লার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে প্রতিষেধক দেওয়া হয় না।

একে তো অভিযান অনিয়মিত। কখনও অভিযান হলেও তা এতটাই নাম কা ওয়াস্তে যে কোনও লাভ হয় না। এই পরিস্থিতিতেই পোলট্রির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। জেলায় পোল্ট্রি ফার্মের (ডিম দেয়) সংখ্যা ৬২টি। ব্রয়লার ফার্মের সংখ্যা ২৮৫০। ডিম দেয় এমন মুরগির সংখ্যা ২২ লক্ষ। ব্রয়লার মুরগি চাষ হচ্ছে এক কোটি ২৩ লক্ষ। তা ছাড়াও গ্রামে গঞ্জে ছোটখাটো ফার্মের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। এখানে ১৮ লক্ষ মুরগি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কতজন নিয়ম মেনে ব্যবসা করেন? নিরুত্তর প্রাণী সম্পদ দফতর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement