রাস্তার অভাব, বারো বছরেও চালু হয়নি সেতু

২০০২ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল দাসপুরের যশাড়ে। আর ২০০৩ সালে সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল ডেবরার লোয়াদায়। ১২ বছর পরেও গুরুত্বপূর্ণ সেতু দু’টি চালু করা যায়নি। সংযোগকারী রাস্তা নেই যে। সংযোগকারী রাস্তার অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু সেতুই যে চালু করা যাচ্ছে না, তা প্রশাসনিক কর্তাদেরও অজানা নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০১:১১
Share:

তৈরি হয়েই পড়ে রয়েছে ডেবরার লোয়াদা সেতু। —নিজস্ব চিত্র।

২০০২ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল দাসপুরের যশাড়ে। আর ২০০৩ সালে সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল ডেবরার লোয়াদায়। ১২ বছর পরেও গুরুত্বপূর্ণ সেতু দু’টি চালু করা যায়নি। সংযোগকারী রাস্তা নেই যে।

Advertisement

সংযোগকারী রাস্তার অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু সেতুই যে চালু করা যাচ্ছে না, তা প্রশাসনিক কর্তাদেরও অজানা নয়। ২-৪ ডেসিমেল জমির জন্য কয়েক কিলোমিটার রাস্তার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও সেতু বা রাস্তার সুফল মেলে না। বহু পরে হলেও লোয়াদা, যশাড় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শিক্ষা নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার জন্যই জেলা পরিষদকে জমি কেনার ক্ষমতা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। এ বার শুধু জমি কেনার ক্ষমতা দেওয়াই নয়, তারই সঙ্গে সেতু নির্মাণ শুরুর আগেই সংযোগকারী রাস্তার জমি কিনে নেওয়ার জন্যও অনুমোদন দিল। ৮টি ক্ষেত্রে অনুমোদন মিলেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “শীঘ্রই বৈঠক হবে। তারপরই জমি কেনা নিয়ে পদক্ষেপ করব।”

ডেবরা থানা এলাকার বালিচকে রেললাইনের উপর উড়ালপুলের দাবি দীর্ঘ দিনের। লেভেল ক্রসিংয়ের ওপারে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং, পিংলা। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, পটাশপুর। আর এ পারে ডেবরা, মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল। মেদিনীপুর থেকে নিয়মিত বাস চলাচল করে। আবার ওপারের মানুষকে মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল বা কলকাতা যেতে হলে এ পথই ভরসা। কিন্তু উড়ালপুল না থাকায় দীর্ঘক্ষণ লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে থাকতে হয়। রেল কর্তৃপক্ষ উড়ালপুল তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু তাতে কী? রাজ্য সরকার সংযোগকারী রাস্তা না তৈরি করলে কী ভাবে উড়ালপুল হবে? তাই খড়্গপুরের পুরী-গেট বা ঝাড়গ্রামের জুবিলি বাজারে উড়ালপুল তৈরি হলেও বালিচকে করা যায়নি।

Advertisement

এ বার অবশ্য রাজ্য সরকার বালিচকে জমি কেনার জন্য জেলা পরিষদকে দায়িত্ব দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করতে গোটগেড়িয়া, খালুই, গৌরাঙ্গপুর, হাড়িমারা ও ভোগপুর মৌজা থেকে ২.৮১১৭ একর জমি লাগবে। ঝাড়গ্রামেও উড়ালপুল তৈরি হয়েছে, কিন্তু সমস্যা থেকে গিয়েছে বহু ক্ষেত্রে। যে কারণে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা যায়নি। যদিও মানুষ যানজট থেকে বাঁচতে নিজেরাই চলতে শুরু করেছেন উড়ালপুলের উপর দিয়ে। উড়ালপুল হলেও দু’দিকে জায়গা প্রশস্ত না থাকায় যানজট এড়ানো কঠিন তো হবেই, এমনকী আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে। ভবিষ্যতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে হলে উড়াপুল লাগোয়া জঙ্গলখাস, রঘুনাথপুর, নতুনডিহি ও বাছুরডোবা মৌজা থেকে ৩.৯৪৩২ একর জমি কিনতে হবে। অনুমতি মিলেছে তারও।

এ ছাড়াও গড়বেতায় শিলাবতী নদীর উপর ঝাড়বনি-মাইতা সেতুর জন্য প্রয়োজন প্রায় ২৫ একর জমি। কয়তা, মাইতা, খামারবেড়িয়া, ঝাড়বনি, বড় পাঁচরোল, ছোট পাঁচরোল-সহ কয়েকটি মৌজা থেকে সেই জমি কিনতে হবে। আর সবংয়ের কাঁটাখালি সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্যও প্রয়োজন ৭.৪৩২৭৮ একর জমি। নিমকি মোহাড়, শিউলিপুর, জয়চাঁদবাড়, পশ্চিমবাড় মৌজা থেকে এই জমি প্রয়োজন। আর রয়েছে সুবর্ণরেখা নদীর উপর ভসরাঘাট সেতু। তার জন্য প্রয়োজন ৮.৩৩৯ একর জমি। এছাড়াও কেশপুর-গোদাপিয়াশাল, গোপীবল্লভপুর-হাতিবাড়ি এবং কল্যানচক-শ্রীনগর রাস্তার জন্যও কোথাও ১ একর আবার কোথাও অতি সামান্য জমির প্রয়োজন। না হলে রাস্তা অতি সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। তার জন্যও জমি কেনার অনুমতি মিলেছে।

কিন্তু জমি মিলবে তো? এ প্রশ্নটাই এখন উঠছে ঘুরে ফিরে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জমি অতি সংবেদনশীল বিষয়। জমিজটে একাধিক সরকারি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও লোয়াদা, যশাড় সেতু চালু করা যায়নি। সবংয়ের বাড়জীবনে সেতু চালু করা যায়নি। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচের পরেও সুফল পাননি এলাকার মানুষ।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ জমি ছাড়তে রাজি হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। যদিও কয়েকজন বৃহৎ স্বার্থে জমি দিতে রাজি থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বসতবাটি থেকে উৎখাত হতে ও চালু ব্যবসা বন্ধ করে জমি ছাড়তে রাজি নন। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, সকলকে বুঝিয়েই জমি কেনা হবে। জেলা পরিষদের সচিব তথা জমি কেনা কমিটির সদস্য সচিব দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উন্নয়নের কথা বুঝিয়েই জমি চাইব। দেওয়া হবে উপযুক্ত মূল্যও। আশা করি সকলেই বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে জমি দিয়ে দেবেন। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement