চন্দ্রকোনায় উদ্ধার বোমা, ল্যান্ডমাইন সন্দেহে আতঙ্ক

গাজন উৎসবে বচসার জেরে যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার জের কাটতে না কাটতেই শুক্রবার ল্যান্ড মাইন উদ্ধার হওয়ার উত্তেজনা ছড়াল চন্দ্রকোনায়। শুক্রবার সকালে কুঁয়াপুর বুথের তৃণমূল যুব নেতার বাড়ি থেকে শ’দেড়েক মিটার দুরত্বে একটি পুকুর থেকে তাজা বড় ১৫ টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পাওয়া যায় একটি ল্যান্ড মাইনও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩০
Share:

চলছে বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

গাজন উৎসবে বচসার জেরে যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার জের কাটতে না কাটতেই শুক্রবার ল্যান্ড মাইন উদ্ধার হওয়ার উত্তেজনা ছড়াল চন্দ্রকোনায়। শুক্রবার সকালে কুঁয়াপুর বুথের তৃণমূল যুব নেতার বাড়ি থেকে শ’দেড়েক মিটার দুরত্বে একটি পুকুর থেকে তাজা বড় ১৫ টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পাওয়া যায় একটি ল্যান্ড মাইনও।

Advertisement

এ দিন বোমাগুলি উদ্ধারের জন্য পুকুরে নামেন পুলিশ ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। তাঁদের পায়ে লাগে একটি ব্যাগ। তাতে ছিল প্রায় ৮ ইঞ্চি লম্বা এবং ৭ ইঞ্চি চওড়া তারের সঙ্গে জড়ানো একটি টিফিন কৌটো। সেটি উদ্ধার করে বম্ব স্কোয়ার্ড প্রাথমিক পরীক্ষার পর একটি ফাঁকা মাঠের কাছে নিয়ে গিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।

মাইনটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে নিষ্ক্রিয় করার সময়ও প্রবল আওয়াজে বিস্ফোরণ হয়। বম্ব স্কোয়াডের এক সদস্যের দাবি, “ওই মাইনটি খুব পুরানো নয়। নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হলে বহু ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা ছিল।” যদিও পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “ চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরের একটি পুকুর থেকে ১৫টি বোমা, একটি হাত কামান এবং একটি কৌটো বোমা উদ্ধার হয়েছে। কৌটা বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে ওই পুকুরে ওই গুলি এল-তার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

Advertisement

এ দিকে এমনিতেই তৃণমূল নেতার প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় বুধবার থেকে কুঁয়াপুর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে। এ দিন তাজা বোমা-সহ ল্যান্ডমাইনের খবর চাউর হতেই আতঙ্ক ছ়়ড়ায়। আপাত শান্ত চন্দ্রকোনা শহর সংলগ্ন কুঁয়াপুর অঞ্চলে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটলেও ল্যান্ডমাইন চোখে দেখেননি এলাকার মানুষ।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। এ দিকে পুরভোটের ঠিক আগে এই ঘটনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব সবকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ থেকে শাসক দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছেন রাজ্যে কী পরিবর্তন হয়েছে। ভোটের জন্যই তৃণমূল বোমা জড়ো করেছিল। বুধবার গুলি চালানোর পর সাধারণ মানুষ খেপে যাওয়ায় সব পুকুরে ফেলে দেয়।”

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য গুরুপদ দত্ত বলেন, “পুরভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে কেশপুর থেকে সব অপরাধীদের ও ওই সব অস্ত্র জড়ো করেছিল তৃণমূল। এখনও বহু অস্ত্র মজুত রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করলেই সব জানতে পারবে। ওই যুব নেতা-সহ এলাকার শাসক দলের সব নেতাদের এসব অজানা নয়। সাধারণ ভোটাররা এখন সবই বুঝে গিয়েছেন। হেরে যাওয়ার আতঙ্ক থেকেই শাসক দল এসব করছে। কমিশনে জানাবো।”

সূত্রের খবর, কুঁয়াপুর অঞ্চলটি চন্দ্রকোনা পুরসভার কাছাকাছি হওয়ায় ভোটের আগে শাসক দলের নেতৃত্বও অস্বস্তিতে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এ সব সিপিএমের আমলে ফেলা দেওয়া অস্ত্র। ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এসব অভিযোগ তুলছে। এ ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’

যদিও তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, বুধবার গুলি চালানোয় অভিযুক্ত যুব নেতা সিদ্ধার্থ আধিকারী চন্দ্রকোনা পুরভোট ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মূল দায়িত্বে ছিল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা উপ-পুরপ্রধান রণজিৎ ভাণ্ডারির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ওই যুব নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের ব্লক স্তরের এক নেতার কথায়, “বুধবারের ঘটনার পরই ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে দল খুব উদ্বিগ্ন। কেননা, ওই দু’টি ওয়ার্ড সিদ্ধার্থই দেখত। এখন ভোটাররাও সব বুঝে গিয়েছেন।” এখন দেখার ভোটের ফলে এই ঘটনা কতটা প্রভাব পড়ে।

এদিকে পুলিশ সূত্রের খবর,বুধবারের দুপুরে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কুঁয়াপুর বুথের সভাপতি সিদ্ধার্থ আধিকারীর ছোঁড়া গুলিতে আহত স্থানীয় যুবক কেবল দোলুই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। ওই রাতেই তাঁর অস্ত্রপচারও হয়েছে। আহত ওই যুব নেতাও ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবারের ঘটনায় রাতেই অভিযুক্ত তৃণমূল যুব নেতার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইনে মামলা শুরু করেছে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশি হেফাজতেই ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি শাসক দলের ওই যুব নেতা।

এদিকে ওই নেতার বাড়ির অদূরের একটি পুকুর থেকে বোমা, একটি হাত কামান ও ল্যান্ড মাইন উদ্ধার হলেও সরাসরি ওই নেতা জড়িত এর কোনও প্রমাণ পুলিশ পায়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কী ভাবে চন্দ্রকোনার মতো এলাকায় এই সব পাওয়া গেল-সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন পুলিশও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার পুলিশ কর্তার কথায়, “ মাওবাদীরা বা জন সাধারনের কমিটির লোকজই এসব মাইন সাধারণত ব্যবহার করে। কোনও নাশকতার ঘটনার জন্যই এসব মাইন ব্যবহার হয়। কিন্তু চন্দ্রকোনার মতো এলাকায় কী ভাবে পুকুর থেকে এটি মিলল-তা খুব চিন্তার বিষয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement