রাজ্যপালের কাছে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র
ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ তদন্ত চেয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসুর সঙ্গে দেখা করলেন ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় তিন বাসিন্দাকে নিয়ে রাজভবনে যান রবীন্দ্রনাথ। রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে কথা বলেন বিধায়ক। ভূপতিনগর থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়েও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানান বিধায়ক।
উল্লেখ্য, ২ ডিসেম্বর রাতে ভগবানপুর-২ ব্লকে বরোজের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়ে যায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়ি। মৃত্যু হয় রাজকুমার সহ আরও দুজনের। পরদিন বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে পৃথক তিন জায়গা থেকে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে গোড়া থেকে অভিযোগ করছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথমে নিহত রাজকুমারের স্ত্রী লতিকা রানি মান্না কিছুই জানেন না বলে দাবি করলেও একদিন বাদেই তিনি পরিবারের নিষেধ সত্ত্বেও স্বামী বাড়িতে বাজি তৈরি করতেন বলে ভূপতিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে এলেও ফরেনসিক রিপোর্ট এখনও পৌঁছয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বিস্ফোরণের তিন সপ্তাহ বাদেও পুলিশ এই ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে সরব হয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে দেওয়ার দাবি তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে তারা। আগামী ৯ জানুয়ারি সেই মামলার শুনানি।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ২০২০ সালে শুধু ভূপতিনগর থানায় বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৮৭টি, ২০২১ সালে ৪৪৪টি এবং চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৪৭৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে। সবই জামিন অযোগ্য ধারায়। এর মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার এবং বোমা উদ্ধারের অভিযোগ রয়েছে এরকম মামলায় পরে চার্জশিটে ধৃত কর্মীদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। শুক্রবার ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কান্ডে এনআইএ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্যপালের কাছে লিখিত আবেদন জানান বিধায়ক। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রাজ্যপালের কাছে তিনি দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। পরে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কান্ডে এনআইএ তদন্ত এবং এলাকায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানা যে ভাবে মিথ্যে মামলার পাহাড় চাপিয়েছে সে ব্যাপারে রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তাঁর হাতে তথ্য সহ অভিযোগ পত্র তুলে দিয়েছি। মাননীয় রাজ্যপাল দু’টি বিষয়ই বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
যদিও গোটা বিষয়টিকে বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে শাসক দল। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘ওখানে এনআইএ তদন্ত করে শুধু আমাদের দলের নেতাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। ওদের পায়ের তলায় যে মাটি নেই, সেটা ওরা ভালভাবে বুঝে গিয়েছে।’’