পরাজিত: গণনাকেন্দ্রের বাইরে বাম প্রার্থীরা। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই কার্যত কোনও উত্তেজনা ছিল না ভোট গণনাকেন্দ্রে। বিরোধী তথা বামেরা যে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তা বোধহয় আগেই টের পেয়েছিল শাসকদল। তাই ভোটের সার্বিক ফল ঘোষণার পর এক তৃণমূল নেতাকে বলতে শোনা গেল, ‘‘যাক, পুরসভাটাকে বিরোধীশূন্য করে ছাড়লেন শুভেন্দুবাবু।’’ যদিও তখন ইতি উতি চলছে কর্মী-সমর্থকদের জয়োল্লাস।
বেলা দশটার দিকে সিপিএম প্রার্থী অচিন্ত্য শাসমল, পরিতোষ পট্টনায়ক বেরিয়ে এলেন গণনাকেন্দ্র থেকে। কিন্তু বাইরে যাবেন কী করে। গেটের বাইরে তখন সবুজ আবির নিয়ে তৃণমূল সমর্থকরা আনন্দে মেতেছেন। তার মধ্যে দিয়েই পুলিশ কর্ডন করে বের করে নিয়ে গেল বামপ্রার্থীদের। উল্টোদিকে তখন ফুলের মালা পরে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীরা ঘুরছিলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডলকে দেখা গেল মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে গল্প করতে। এদিন বিকেলে হলদিয়ার দুর্গাচকে দলের সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘হলদিয়া পুরসভাকে আপনারা চোখের মণির মতো করে রক্ষা করবেন। পানীয় জল, নিকাশির মতো কাজকে অগ্রাধিকার দেবে এই পুরসভা।’’ তিনি জানান, আগামী রবিবার রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়ে পালিত হবে বিজয় উৎসব। সংযত থেকে মানুষের কথা ও চাহিদা পুরণ করতে হবে বলে বিজয়ী কাউন্সিলরদের জানান তিনি।
২৯টি ওয়ার্ডের হলদিয়া পুরসভায় তৃণমূল ঝড়ে উড়ে গেল বাম, বিজেপি। ২০১৬ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে হলদিয়া বিধানসভায় তৃণমূল ১ লক্ষর বেশি ভোটে এগিয়েছিল। শুধুমাত্র পুরএলাকায় লিড ছিল ৭০ হাজার। ২৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই লিড ছিল শাসক দলের। উপনির্বাচনের সময় থেকেই তৃণমূল নেতা তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী পুরসভায় নিরঙ্কুশ জয়ের লক্ষে একাধিক ভাল বাম সংগঠককে দলে টেনেছিলেন। ফলে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হিসেবে বামেদের পুরভোটের আগে প্রার্থী নির্বাচনে খানিকটা হিমসিমও খেতে হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারে। পুরভোটের ফলে দেখা গেল বামেরা নয়, তৃণমূলকে টক্কর দিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। ২৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে ২২টি ওয়ার্ডেই তারা দ্বিতীয় স্থানে। তবে বিজেপির লোকসভা উপনির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমেছে। যদিও বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি মলয় সিংহ জানান, হলদিয়ায় তো ভোটই হয়নি। তার আবার ভোট কমার প্রশ্ন! বিজেপির দাবি, এই ভোটে মানুষ তাদের রায় দিতে পারেনি।
তৃণমূল নেত্রী তথা জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘এই জয় আমাদের অনেক দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল। হলদিয়া পুরসভা যাতে আরও ভাল পরিষেবা দেয় সেটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।’’
পুরভোটের এমন ফলে বামেরা অবশ্য হতাশ নয়। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য শ্যামল মাইতির দাবি, ‘‘এই ভোটে প্রহসন হয়েছে। এক একটা ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থীকেই ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।’’ একই সুরে শাসক দলকে বিঁধেছে বিজেপিও। দলের জেলা সভাপতি মলয় সিংহ বলেন, ‘‘মানুষকে ভোট দিতে দিলে তৃণমূলকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়তে হতো।’’