ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সৈকত শহর দিঘায়। তার জন্য ফের হকারদের সৈকত এলাকা এবং রাস্তার ধার থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর এই নির্দেশের পরেই শাসক ও বিরোধী শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য স্টল বণ্টনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করা হয়েছে। হকার নন, এমন অনেকে স্টল পেয়েছেন। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছে তারা। বিতর্ক এড়াতে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, এখনও হকারদের মধ্যে স্টল বণ্টন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এখনও কয়েকশো স্টল বণ্টন বাকি রয়েছে বলে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, দিঘায় হকারদের পুনর্বাসনে স্টল বানাতে অর্থ দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। রাজ্য সরকারের সুপারিশে দিঘায় হকারের সংখ্যা কত, তা জানতে সমীক্ষা করা হয়। ২০১১-’১২ সালে ওই সমীক্ষার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। ডিএসডিএ সূত্রে খবর, ২ হাজার ৪৬৪ জন সেই সময় হকার পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল। মূলত এঁদের পুনর্বাসনে স্টল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও প্রশাসনের দাবি, গত সাত বছরে দিঘায় পর্যটক সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফলে নতুন করে অনেকেই অস্থায়ী দোকানপাট ও ব্যবসা শুরু করেছেন। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য ওই সব অস্থায়ী দোকান সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষ। গত ৮ সেপ্টেম্বর এর জন্য মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের পরে দিঘায় নতুন করে কারা ব্যবসা শুরু করেছেন তার কোনও তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। তা ছাড়া হকারদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও কোনও সমীক্ষা হয়নি। এর মধ্যে ওল্ড এবং নিউ দিঘায় হকারদের পুনর্বাসনে বেশ কিছু স্টল হয়েছে। সেগুলিতে ২০০০ জনের বেশি হকার স্টল পেয়েছেন। বাকিরাও যাতে ওই স্টল পেতে পারেন, সে জন্য ইতিমধ্যেই হকারদের বিলি করা কুপন সংগ্রহ করছে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষ। যদিও হকারদের স্টল বণ্টনের এই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি (কাঁথি) তপন কুমার মাইতি বলেন, ‘‘দিঘায় একেক জন ৩০-৪০টি স্টল পেয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, হকার পেশার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন অনেকেও স্টল পেয়েছেন। অথচ যাঁরা দীর্ঘদিন এই পেশায় যুক্ত, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি।’’
ওল্ড দিঘার ব্লু-ভিউ স্নানঘাটের কাছে খেলনা সামগ্রী বিক্রি করেন এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৮৬ সাল থেকে দিঘায় হকারি করছি। পুনর্বাসনে কোনও স্টল পাইনি। অথচ দোকানের পসরা নিয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১১ সালের পর যাঁরা দিঘায় এসে ব্যবসা করছেন, তাঁদেরকে পুনর্বাসন স্টল দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও নেওয়া হয়নি। এই নিয়ে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলেন, ‘‘কতজন হকারকে পুনর্বাসনে স্টল দিতে হবে, বিজেপিকে তার তালিকা বানিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। এখনও তারা তা দিতে পারেনি।’’ স্থানীয় সাংসদ ও দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, ‘যাঁরা আগে থেকে ব্যবসা করতেন তাঁরাই পুনর্বাসন পাচ্ছেন। বিরোধীদের অভিযোগ একেবারেই অসত্য।’’