প্রথমে চিঠি দিয়েই আমন্ত্রণ করা হয় সাংসদকে। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলে প্রশ্নের মুখে সৌজন্যের রাজনীতি! ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের অভিযোগ কিন্তু এমনই।
সাংসদের নালিশ, এখন সাধারণ সামাজিক কর্মসূচিতেও তাঁর যাওয়া আটকাতে উদ্যোক্তাদের ভয় দেখাচ্ছে শাসকদল ও পুলিশ। কুনার জানাচ্ছেন, গত বৃহস্পতিবার জামবনি ব্লকের দুধিয়াশোল গ্রামে একটি আদিবাসী ক্লাবের কয়েকজন উদ্যোক্তা বাড়িতে এসে লিখিতভাবে তাঁকে ফুটবল খেলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও শীতবস্ত্র বিলি কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রবিবার দুপুর থেকে ছিল অনুষ্ঠান। কিন্তু ওই দিন সকালে উদ্যোক্তারা ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের কন্যাডোবায় সাংসদের বাড়িতে এসে জানান, তিনি গেলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। সাংসদকে তাঁরা মঞ্চে জায়গা দিতে অপারগ বলেও জানান। কুনার পাল্টা জানিয়ে দেন, সাংসদ হিসেবে নয়, দেশের নাগরিক ও একজন দর্শক হিসেবে তিনি যাবেন।
সেই রবিবার কুনার ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তবে মঞ্চে ওঠেননি। উদ্যোক্তারা মাঠেই সাংসদকে চেয়ার এগিয়ে দেন। কুনারের অভিযোগ, শনিবার রাতে পুলিশ গিয়ে উদ্যোক্তাদের ধমকছে। তিনি বলছেন, ‘‘উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়ুন আমি চাইনি। তাই মঞ্চের দিকে যাইনি। কিছুক্ষণ নাচগান ও খেলা দেখে চলে এসেছি।’’ সূত্রের খবর, ওই অনুষ্ঠানে তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতারাও আমন্ত্রিত ছিলেন। কয়েকজন এসেছিলেনও। তবে বিনপুরের তৃণমূল বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি। দেবনাথ বলছেন, ‘‘আমার অন্য কর্মসূচি ছিল, তাই যাইনি। আর সাংসদ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। তাঁকে কেউ কেন আটকাতে যাবে?’’
ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরত সরেন অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশের তরফে আপত্তি ওঠায় সাংসদের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একাংশ উদ্যোক্তা দাবি করেন, তাহলে সাংসদ-বিধায়ক দু’জনেরই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হোক। বিধায়ক আসেননি। তবে সাংসদ এসেছিলেন। তাঁকে মঞ্চে ডাকা হয়নি।’’
কুনারের ক্ষোভ, ‘‘সৌজন্যের রাজনীতি অনেক আগেই ভুলেছে তৃণমূল। এখন সামাজিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলোতেও পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘সাংসদকে কেউ যদি না চান, তার দায়ও কি আমাদের সরকার নেবে নাকি! গুরুত্ব না পেয়ে উনি আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর পাল্টা জবাব, ‘‘সাংসদ তাঁর তহবিলের টাকায় প্রভুত উন্নয়নের কাজ করছেন। সেই কারণেই ভয় পেয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সাংসদকে আটকানোর চেষ্টা করছে শাসকদল।’’
কিন্তু পুলিশ কেন আটাকাল সাংসদকে?
জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহার দাবি, ‘‘কারা আমন্ত্রিত হবেন, তা উদ্যোক্তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্তের বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেটা পুলিশের দেখার কথা এবং সেটুকুই দেখা হয়েছে।’’