পুরবোর্ড দখল স্বপ্নই, ৭-এ থামল বিজেপি

রেলশহরে লোকসভার ফল ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৮-এর কাছাকাছিও যেতে পারেনি তারা। যদিও গত লোকসভার নিরিখে ১৯টি আসনে এগিয়ে ছিল পদ্ম-শিবির। পুরভোটে তাদের থেমে যেতে হল ৭ টিতে। লোকসভায় যেখানে ২৭ শতাংশ ভোট মিলেছিল, তা কমে হল ২১ শতাংশ ভোট। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন লোকসভা আর পুরসভার ভোট এক নয়।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১০
Share:

খড়্গপুরে বামেদের উচ্ছ্বাস। — নিজস্ব চিত্র।

রেলশহরে লোকসভার ফল ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৮-এর কাছাকাছিও যেতে পারেনি তারা। যদিও গত লোকসভার নিরিখে ১৯টি আসনে এগিয়ে ছিল পদ্ম-শিবির। পুরভোটে তাদের থেমে যেতে হল ৭ টিতে। লোকসভায় যেখানে ২৭ শতাংশ ভোট মিলেছিল, তা কমে হল ২১ শতাংশ ভোট। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন লোকসভা আর পুরসভার ভোট এক নয়। তাই বলা যায় দলের ফল মোটের উপর ভালই হয়েছে।

Advertisement

হিসাব বলছে গত পুরভোটে মাত্র ১টি আসন দলের দখলে এসেছিল বিজেপি-র। তাহলে এ বার বেড়েছে ৬টি। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল। তাতেও এই ফলের জন্য মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ তাঁর দাবি, কয়েকটি আসনে কম ব্যবধানে হার হয়েছে।

রেলশহরের বিজেপিতেও বিক্ষুব্ধ কাঁটা ছিল। বেশ কিছু আসনে দলীয় কর্মীরাই নির্দল হিসেবে লড়েছেন। কিন্তু তার প্রভাব ভোটের ফলে পড়েনি বলে দাবি করে তুষারবাবু বলেন, ‘‘ভোটে আমরা একজোট হয়েই লড়াই করেছি।’’

Advertisement

অন্যদিকে খড়্গপুরে বামেদের লক্ষ্য ছিল, ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। ভোটের ফলেও ইতিবাচক ইঙ্গিতই মিলেছে। গত পুরভোটে খড়্গপুরে ৭টি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সমর্থিত নির্দল। পুরভোটের পর নির্দল কাউন্সিলর কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছিলেন। পরে দুই সিপিএম কাউন্সিলরও কংগ্রেসে যোগ দেন। অন্যদিকে, এক সিপিআই কাউন্সিলর তৃণমূলের দিকে ঝোঁকেন। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে রেলশহরে বামেদের আসন কমে হয় চার। সেখানেই এ বার তারা ৬টি আসন পেয়েছে। ৩টি সিপিএম, ৩টি সিপিআইয়ের। প্রাপ্ত ভোট ১৯ শতাংশ। এতে খুশি বাম শিবির। সিপিএমের খড়্গপুর শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন চেষ্টা করেও খড়্গপুরে তৃণমূলকে জেতাতে পারল না। কংগ্রেস, তৃণমূলের আসন কমেছে। আমাদের ফল ভালই হয়েছে। পুরসভায় বিরোধী আসনে বসব।’’ সিপিআইয়ের জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের দাবি, ‘‘যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, সেখানেই আমাদের ফল ভাল হয়েছে।’’

জয়ের আবিরে রঙিন তুষার মুখোপাধ্যায়।

তবে পুরবোর্ড গঠনের আশা করেন না বামফ্রন্ট। সিপিএমের এক নেতার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘রেলশহরের পুরবোর্ড গঠন করব, এই কল্পনা আমরা কোনও দিনই করিনি। চেয়েছিলাম, খড়্গপুরের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকতে। পুরভোটের ফলই বুঝিয়ে দিচ্ছে, যে যাই দাবি করুক, রাজনীতিতে আমরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়িনি।’’

খড়্গপুর শহর কংগ্রেসের ‘গড়’ বলেই পরিচিত। ২০১০ সালের আগে টানা ১৫ বছর পুরবোর্ড ছিল কংগ্রেসের দখলে। এক দশক আগে শহরে তৃণমূলের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা সত্যি করে ফল ভাল হয়েছে বিজেপি-র। গত লোকসভা ভোটে ১৯টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকে প্রথম দল হিসেবে উঠে আসে তারা। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫১ হাজার অর্থাৎ ২৭.৫২ শতাংশ। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এই ফল ধরে রাখা যাবে না তা আগেই জানিয়েছিলেন পর্যবেক্ষকরা। তবে গত পুরভোটের থেকে তাদের ফলাফল অনেকটাই ভাল। এ বার বিজেপি পেয়েছে ৩২,৭৩৯ ভোট, যা প্রাপ্ত ভোটের ২১.২৮ শতাংশ। অন্যদিকে বামফ্রন্ট পেয়েছে ২৯,৫০৪ ভোট, যা প্রাপ্ত ভোটের ১৯.১৮ শতাংশ।

কিন্তু ত্রিশঙ্কু খড়্গপুরে নির্ণায়ক হবে কারা, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। কংগ্রেস, তৃণমূল দু’দলই ১১টি করে আসন পেয়েছে। ৭টি আসন দখলে রাখা পদ্ম-শিবির সেই নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে। দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝাঁ বলেন, ‘‘আলোচনা করেই চূড়ান্ত হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement