মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিজেপির বিক্ষোভ। সোমবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
ঘরে ফিরতে মরিয়া ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তাঁদের নিয়ে রাজনীতিতে ছেদ পড়ল না সোমবারও। পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে কেন্দ্রের— এই অভিযোগ তুলে বেলদায় পোস্টার দিল শাসক তৃণমূল। রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন মহকুমা শাসকের অফিস, ব্লক অফিসের সামনে ধর্না, অবস্থান কর্মসূচি পালন করল বিজেপি। এ দিন পথে নেমেছিল বাম, কংগ্রেস ও এসইউসি-ও।
এ দিন বিজেপির কৃষক সংগঠন, ওবিসি সংগঠন, সংখ্যালঘু সংগঠনের ডাকে জেলার সমস্ত ব্লক অফিস, এসডিও অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, এখনও দেশের নানা প্রান্তে কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন। তাঁদের কষ্টে দিন কাটছে। মজুত টাকা শেষ। খাবারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত তাঁদের বাড়ি ফেরাতে রাজ্য সরকার সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ বিজেপির। এসডিও, ব্লক অফিসে দেওয়া স্মারকলিপিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা-সহ নানা দাবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে রেশন দুর্নীতি বন্ধের দাবিও। সবংয়ে ব্লক অফিসের সামনে কর্মসূচিতে বিজেপির সবং বিধানসভার পর্যবেক্ষক শিশির কুলভী বলেন, “সরকার বলা সত্ত্বেও শ্রমিকদের ভিন রাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। আমাদের ব্লকের ছেলেরা বাইরের রাজ্য কাজে গিয়ে বিপদে পড়েছে। অথচ এখানে প্রশাসন ওই শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন।’’ অন্য জায়গার মতো নারায়ণগড়ের ব্লক অফিসে কর্মসূচি হলেও বিকেলে একই বিষয়ে নারায়ণগড় মধ্য মণ্ডল বেলদা স্টেশনের সামনে আলাদাভাবে কর্মসূচি করতে দেখা যায়।
তৃণমূল সরাসরি পথে নামেনি। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে তারা হাতিয়ার করেছিল ঔরঙ্গাবাদে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাকে। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি তুলে নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূল ও শ্রমিক সংগঠন পোস্টার দিয়েছে বেলদায়। এ দিন এই পোস্টার প্রকাশ্যে আসে। তাতে প্রথমেই পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পরে ‘লেখা-গরিবের শত্রু, ধনীর দালাল, অমানবিক প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে’। নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, ‘‘শ্রমিকদের ফেরানোর ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতি না নেওয়ায় এই প্রাণহানি। তাই দলের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে।’’
নারায়ণগড়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
একই বিষয়ে এ দিন পথে নেমেছে বাম, এসইউসি ও কংগ্রেস। সিপিএমের যুব সংগঠনের তরফে জেলাশাসকের অফিস ও জেলার সমস্ত মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি হয়। প্রতি ব্লক অফিসেও হয়েছে অবস্থান। বাদ পড়েনি এসইউসিও। ঔরঙ্গাবাদের ঘটনার প্রেক্ষিতে এসইউসি এ দিনটাকে শোক দিবস হিসেবে পালন করেছে। বেলদা ট্রাফিক স্ট্যান্ডে শহিদ বেদি গড়ে মাল্যদান হয়েছে। বাম এবং এসইউসি পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’পক্ষকেই বিঁধেছে।
মেদিনীপুরে কালেক্টরেটে এ দিন স্মারকলিপি দিয়েছে জেলা কংগ্রেস। ভিন্ রাজ্যে আটকে রয়েছেন, এ জেলার এমন ৩৬৫ জনের তালিকাও কালেক্টরেটে জমা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।