সুযোগ বুঝে মাঠে বিরোধীরা

নান্টু বিনে কে, চিন্তা তৃণমূলে

এ বার ছবিটা একেবারেই আলাদা। জোর করে চাষের জমিতে ভেড়ি করা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই নান্টু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল এলাকায়।

Advertisement
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৪
Share:

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মনোনয়ন দিতে গিয়ে তাঁর ও তাঁর দলবলের হাতে মারধর, হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। এমনকী তাঁর হাত ধরে পঞ্চেয়েতে জেতা নিয়েও কোনও সন্দেহ ছিল না শাসক দলের। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ পাত্তাই পায়নি। দলকে পঞ্চায়েতে জিতিয়ে এলাকায় আরও ভগবানপুর এলাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন নান্টু প্রধান।

Advertisement

কিন্তু এ বার ছবিটা একেবারেই আলাদা। জোর করে চাষের জমিতে ভেড়ি করা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই নান্টু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল এলাকায়। নান্টুর এ হেন কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ ছিল জেলা তৃণমূলের একাংশেও। এলাকায় সেই ক্ষোভের জেরেই মাস খানেক আগে খুন হন নান্টু। ছেলেকে শোধরাতে বললেও সে যে তাঁর কথা শুনত না তা স্বীকার করেন নান্টুর বাবা ও প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান চাঁদহরিবাবুও। শুধু নান্টু নন, তাঁর ভাই পিন্টুর কাজকর্ম নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। দিন কয়েক আগে এক মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনায় বর্তমানে জেলে পিন্টু। এই অবস্থায় ভগবানপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্ব কে সামলাবে সেই প্রশ্ন এখন দলের মধ্যে।

উল্টোদিকে নান্টু-পিন্টু না থাকার সুযোগকে কাজে লাগাতে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও। গতবার এঁদের দাপটে প়ঞ্চায়েতে পাত্তা না পাওয়া বাম-বিজেপির আশা, এ বার অন্তত মনোনয়ন পর্বটা নির্বিঘ্নে কাটবে। বিজেপির তমলুক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের মৃত্যুর পর এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। গতবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। তবে এখন মানুষের ভয় কেটেছে। এ বার আমাদের দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্য ২৫টি পঞ্চায়েত ও ২টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের অনেক বিক্ষুদ্ধ নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবে বলে জানতে পেরেছি।’’

Advertisement

বিরোধীদের আশা আরও মজবুত হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বপন রায়ের কথায়। তৃণমূলের প্রাক্তন বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘মনোনয়নের নামে বিরোধীদের যে ভাবে মারা হচ্ছে তা খুবই ন্যক্কারজনক, অবাঞ্ছিত।’’ নান্টু ও পিন্টুর কাজকর্মে এলাকার মানুষের ক্ষোভ নিয়ে দল যে স্বস্তিতে নেই তাও বোঝা গিয়েছে স্বপনবাবুর মন্তব্যে। এদিন তিনি এও বলেন, ‘‘পিন্টু প্রধানকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিল। সারাক্ষণ কুকর্ম করে বেড়ায়। এখন জেলে রয়েছে। যারা আইন ভাঙে এবং কুকর্ম করে বেড়ায় তাদের শাস্তি পেতেই হবে। আইন আইনের পথে চলবে। দলের তরফেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে পিন্টুকে আইনের দলের তরফে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে সে যাতে ছাড়া পায় এমন কোনও চেষ্টা দল করছে না। দোষী হলে তার শাস্তি পেতেই হবে।’’

এই অবস্থায় পঞ্চায়েতে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে চিন্তায় দল। কারণ, নান্টু ও পিন্টুর ‘কুকর্মের’ জেরে এলাকার মানুষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ। তাই তাঁদের পরিবার থেকে কাউকে পঞ্চায়েত প্রার্থী করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে দলে। এমনকী দলে ক্ষোভও দেখা দিতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

যদিও নান্টুর বাবা প্রাক্তন উপপ্রধান চাঁদহরিবাবু দাবি করেছেন, ‘‘দল এবারও আমাকে প্রার্থী করবে।’’ চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নান্টু প্রধানের বাবা চাঁদহরিবাবু মহম্মদপুর গ্রামপঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবেন। উনি দীর্ঘদিন ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দলের অঞ্চল সভাপতি। এলাকার মানুষের চাওয়ার ভিত্তিতে চাঁদহরিবাবুকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উনিও সম্মত হয়েছেন।’’

তবে চাঁদহরিবাবু প্রার্থী হলেও এলাকার দায়িত্ব কার হাতে সঁপে দেওয়া যাবে সেই চিন্তা থেকেই গিয়েছে দলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement