দেওয়াল লিখনে এখনও প্রার্থী মুসুদা বিবি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে এখনও তাঁর নাম জ্বল জ্বল করছে। প্রার্থী হিসেবে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তাঁর হয়ে প্রচারেও নেমে পড়েছিলেন বামফ্রন্ট কর্মীরা। তবু এ সবের পরেও ভোটের ময়দানে তিনি অদৃশ্য। আর এই ঘটনা নিয়েই ভোটের আগে বাকযুদ্ধে নেমে পড়েছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম এবং তৃণমূল।
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে খারুই-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন মুসুদা বিবি। স্থানীয় গোড়াইখালি, সাতটিকরী, উত্তর ও দক্ষিণ মির্জাপুর—চারটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে ওই পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বাম প্রার্থী হিসেবে মুসুদা বিবির সমর্থনে দেওয়াল লিখনও সারা হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের নীলিমা দেবাধিকারীর বিরুদ্ধে তুল্যমূল্য প্রচারে অনেকেই ভেবেছিলেন এ বার জোর লড়াই হতে চলেছে। কিন্তু সকলকে হতাশ করে এখন ভোটের ময়দান থেকেই বেপাত্তা মুসুদা বিবি।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে মুসুদা বিবি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন নীলিমাদেবী। সোমবার গোড়াইখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের দেওয়ালে বাম প্রার্থী হিসেবে গ্রামপঞ্চায়েতে রোজিনা বিবি, পঞ্চায়েত সমিতিতে মুসুদা বিবি ও জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে সবিতা মান্নার নাম রয়েছে। ভোটগ্রহণের আগেই মুসুদা বিবির এ ভাবে রণে ভঙ্গ দেওয়া নিয়ে শাসক তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে সিপিএম। কারণ শুধু মুসুদা বিবিই নন, খারুই-২ পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের সব ও ১১টি গ্রামপঞ্চায়েত আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, খারুই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে সাতটিকরী, গাদিন ও আলুয়াচক গ্রামপঞ্চায়েত আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে গাদিন ও আলুয়াচক পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি বামফ্রন্ট। সাতটিকরী আসনে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য অমল কুইল্যার অভিযোগ, ‘‘বিরোধী প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতেই না পারে সেজন্য বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূলের লোকজন জমায়েত করে আক্রমণের কথা এখন রাজ্যের মানুষ জেনে গিয়েছেন। তারপরেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তমলুকে মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রার্থীদের নামে দেওয়াল লিখন করে প্রচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের লোকজন যে ভাবে লাগাতার হুমকি দিচ্ছিল তাতে মুসুদা বিবি-সহ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।’’
সিপিএমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা। তাঁর দাবি, ‘‘মুসুদা বিবি বামপ্রার্থী হিসেবে প্রথমে মনোনয়ন জমা দিলেও এলাকায় উন্নয়নে সামিল হওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।’’
গোড়াইখালি গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য মতিউর রহমান বলেন, ‘‘মুসুদা বিবি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর আমরা দেওয়াল লিখে প্রচারও শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ উনি আমাদের কিছু না জানিয়েই প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। এতেই বোঝা যায় কতটা ভয় পেয়েছেন। উনি বাড়িতে না থাকায় ওঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারা যাচ্ছেন না।’’