মাস দেড়েক আগে কিস্তিতে ১৫ হাজার টাকার শাড়ি কিনেছিলেন বেলদার আরতি জানা। প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা দিলেও ১০ হাজার টাকা বাকি ছিল। দিন-দু’য়েক আগে পাঁচশো টাকার নোটে ১০ হাজার টাকা একসঙ্গে শোধ করে দেওয়ার দিতে চেয়েছিলেন আরতিদেবী। কিন্তু ব্যবসায়ী তা নিতে নারাজ। আরতিদেবী বলছেন, ‘‘আমার কাছে পাঁচশো টাকার নোট ছিল। ব্যাঙ্কে গেলে লাইনে দাঁড়াতে হবে। তাই ওই টাকায় ধার শোধ করে দিতে চেয়েছিলাম’’ আর বেলদার কাপড় ব্যবসায়ী রাজু চাণ্ডকের বক্তব্য, “আমরা এত পুরনো নোট নিয়ে কী করব। এই অবস্থায় লক্ষ-লক্ষ টাকা বাজারে পড়ে থাকছে। খুব বিপদে পড়েছি।’’
নোট বাতিলের ধাক্কায় খড়্গপুর, বেলদার মতো ব্যবসায়িক এলাকায় রীতিমতো সঙ্কটে ব্যবসায়ীরা। কাপড় থেকে পাইকারি সব্জি— সব দোকানেই ধারের অঙ্ক বাড়ছে। ক্রেতারা চাইছেন পাঁচশো-হাজারের বাতিল নোট বাজারে চালিয়ে দিতে। কিন্তু অচল নোট নিলে বিপদ বাড়বে। অতিরিক্ত পরিমাণে বাতিল নোট ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে সমস্যায় পড়বে। তাই ধারের বোঝা মাথায় নিয়েও পাঁচশো-হাজারের নোট নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ দিকে, খাতায় ধারের অঙ্ক বাড়তে থাকায় লোকসান বাড়ছে। টাকার লেনদেন কমে যাওয়ায় মহাজনদের থেকেও জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বেলদার বাসিন্দা এগরায় মুদি দোকানেরর পাইকারি ব্যবসায়ী বাদল সাহার কথায়, “বেলদার লাখপতি বাজার থেকে জিনিস কিনে এগরায় নিয়ে যাই। সারাবছর ধারে লেনদেন চলে। কিন্তু এখন পাঁচশো-হাজারের নোট অচল হয়ে যাওয়ায় বেশি জিনিস কিনতে পারছি না। আর পাঁচশো টাকার নোটে ধার শোধ করলে মহাজনেরাও নিতে চাইছে না। লোকসান বাড়ছে।’’
একই ছবি খড়্গপুরে শহরেও। টাকা তোলার পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার টাকা করে দেওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। কাপড় থেকে সব্জি-মাছ— মানুষের হাতে টাকার জোগান কম থাকায় কেনাকাটায় ভাটা পড়ছে। শহরের বাসিন্দা হেমন্ত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেখানে ধার রয়েছে সেখানে পাঁচশোর নোট চালাতে চাইছি। কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। আবার দু’হাজার টাকার নোটে জিনিস কিনতে গেলে খুচরোর অভাব। এতো উভয় সঙ্কট।’’
সঙ্কটে সব্জির পাইকারি ব্যবসাও। খড়্গপুর গোলবাজারে সব্জির পাইকারি ব্যবসায়ী কেশবপ্রসাদ গুপ্তের কথায়, “আগের ধার এখনও শোধ করেনি অনেক খুচরো বিক্রেতা। পাঁচশো-হাজার টাকার নোটে সবাই ধার শুধতে চাইছে। আমি নিচ্ছি না।’’ মাথায় ধারের বোঝা নিয়ে কী বাবে ব্যবসা চালাবেন, সেটাই এখন ভাবনা কেশবপ্রসাদের মতো ব্যবসায়ীদের।