বিস্ফোরণের রাত আজও ভোলেনি পিংলার ব্রাহ্মণবাড় গ্রাম।
চোখের সামনে বাজি কারখানার আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া মনে আছে বেলদার বড়মোহনপুরেরও।
সেই স্মৃতি ফের ফিরে এল খাস মেদিনীপুর শহরে। বিবিগঞ্জের ধুনুরি বস্তিতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে বৃহস্পতিবার রাতে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। আচমকা বিকট আওয়াজে বাইরে বেরিয়ে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রাণও গেল দু’জনের। পিংলা বা বেলদার মতো মেদিনীপুরেও উঠছে সেই একই প্রশ্ন, প্রতিবার বিস্ফোরণের পর দিন কয়েক পুলিশ সক্রিয় হয়। অভিযান চলে। তারপরে ফের যে কে সেই। প্রকাশ্যে বাজি কারবার বন্ধ হলেও গোপনে রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ।
২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বেলদার গুড়দলা সংলগ্ন বড়মোহনপুরে লোচন দাস অধিকারীর বেআইনি বাজি তৈরির কারখানায় চলছিল নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরির কাজ। হঠাৎ কেঁপে ওঠে ওই এলাকা। স্থানীয়রা ছুটে এলে দেখা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ওই বাজি কারখানা। ঘটনায় মৃত্যু হয় স্থানীয় দুই যুবকের। পালিয় যায় লোচন দাস অধিকারী ও তার পরিবারের লোকেরা। অভিযোগ, এলাকাবাসীর চাপে লোচন দাস অধিকারীকে পরে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কিছুদিন জেলে থাকার পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায় লোচন। অভিযোগ, আজও বড়মোহনপুরে বাজি ব্যবসায় দাঁড়ি পড়েনি। এলাকার প্রায় ১১টি পরিবারের লোকেরা ঘুরপথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানকার বাজি কারবারিরা বাড়ি থেকে ব্যবসার জাল গুটিয়ে এগরা সংলগ্ন কৌরদা, সররংয়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গোপনে বাজি তৈরি করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ, বিভিন্ন পুজো কমিটির অর্ডার মতো নানা হাত ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে রকমারি বাজি। উৎসবের মরসুমে চাহিদা বেশি থাকায় এলাকার কয়েকটি বাড়িতে বাজি তৈরি চলছে।
গুড়দলার বাসিন্দা নিমাই পড়িয়ার অভিযোগ, “মেদিনীপুরের ঘটনা শুনে ২০১৩ সালের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। পুলিশি অভিযানের পর গ্রামে বাজি ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ। কিন্তু অনেকেই পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে কাজ করছেন।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘পুজোর আগে শুনেছি বড়মোহনপুরে একজন ফের কারবার শুরু করেছেন। তাই ভয়েই রয়েছি।”
ঘটনার কথা স্বীকার করছেন বড়মোহনপুরের বাসিন্দা বাদল বর্মনও। তিনি বলছেন, “এখানে এখন অধিকাংশ লোক বাজির অর্ডার নিয়ে গিয়ে বাইরে কাজ করছে। তবে কেউ কেউ এখন উৎসবের মরসুমে গোপনে টুকটাক কাজ করছে বলে শুনেছি। তবে আমরা এলাকার বাসিন্দারা সতর্ক রয়েছি। এমন ঘটনাকে প্রশ্রয় দেব না।” ২০১৫ সালের ৬ মে রাতেও ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ব্রাহ্মণবাড় গ্রাম। বিস্ফোরণে ৯ জন শিশু-সহ ১৩জনের মৃত্যু হয়। যদিও পিংলা ও সবংয়ের বিভিন্ন এলাকায় এখনও গোপনে বাজির কারখানা চলছে বলে অভিযোগ।
পুলিশের অবশ্য দাবি, এখনও পর্যন্ত অভিযানে বেআইনি কারখানার হদিস মেলেনি। আজ, শনিবার থেকে ফের অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছে বেলদা থানার পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “নিয়মিত অভিযান চলছে। ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিটি থানা এলাকায় অভিযান চলেছে। পুজোর আগে ধারাবাহিক অভিযানে নামা হচ্ছে।”