ঝুঁকি: এ ভাবে অটোয় যাতায়াতই দস্তুর। নিজস্ব চিত্র
চালক-সহ চার জন যাত্রী তোলাই নিয়ম। অথচ নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে গড়ে ১০-১২ জন যাত্রী নিয়েই ছুটছে অটো!
চালকের দু’পাশে যাত্রী তোলার নিয়ম না থাকলেও মানছে কে। নিজের দু’পাশে গড়ে ৪-৫ জন যাত্রী তুলছেন চালক। একজনের কোলে বসছে আর একজন। চালকের পিছনে কখনও কখনও আবার বসার জায়গাও মেলেনা। চলন্ত অটোতে দাঁড়িয়েই যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের।
দিন কয়েক আগেই জাতীয় সড়কে অটো উল্টে ভাদুতলা হাইস্কুলের দুই পড়ুয়ার মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি কারও। আগের মতোই জাতীয় সড়কে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে অটো। ভাড়া দিয়েও অটোতে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হওয়ায় ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘এক এক সময় অটোয় বসার জায়গাও মেলে না। মনে হয় যেন গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে।’’
মেদিনীপুর শহরের আবাস, কেরানিচটি, কর্ণগড় থেকে অনেক ছেলেমেয়ে ভাদুতলা স্কুলে যায়। ভাদুতলা থেকে কর্ণগড় রুটে বাস চলে না। ফলে যাতায়াতের জন্য অটোই ভরসা। আর ভাদুতলা থেকে কেরানিচটি রুটে বাস মিললেও কন্ডাক্টর পড়ুয়াদের তুলতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। এক বাস কন্ডাক্টরের কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা কনসেশনের জন্য কম ভাড়া দেয়। তাই তাদের বাসে তুললে আমাদের লোকসানের বহর বাড়বে।’’ বাস না নিতে চাওয়ায় এই রুটে জাতীয় সড়কে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অটো চলায় প্রতি মুহূর্তে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
ভাদুতলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দেবদত্ত সিংহ, সূর্য সিংহ ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বিদ্যুৎ সিংহের বাড়ি ডাঙ্গরপাড়ায়। অটোতেই স্কুলে যাতায়াত করে তারা। তাদের কথায়, ‘‘অটোর সংখ্যা কম হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। আমরা তিন টাকাই ভাড়া দিই। অথচ চালক আমাদের অটোর সিটে বসতে দেয় না। কারও কোলে বসতে হয়। না হলে দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।’’
তারা আরও বলছে, ‘‘দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যেতে হওয়ায় ঘাড়ে ব্যথা করে। রাস্তার হাম্প পেরোনোর সময় অটোর ছাদে মাথায় ঠোকা লেগে যায়। আর গরমে তো অবস্থা আরও খারাপ হয়।’’
নিয়ম না মানার কারণ কী? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটো চালকের জবাব, ‘‘ছোট অটোতে সকলকে নিতে হলে এ ভাবেই যেতে হবে। সমস্যা মেটাতে হলে প্রশাসন বাস নামাক।’’ কর্ণগড় রুটে কি অটোর সংখ্যা কম? আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শশধর পলমল বলেন, ‘‘গ্রামে অটোর রুট পারমিট থাকা সত্বেও অনেকে সেই রুট না মেনে শহরে অটো চালায়। সে জন্যই এমন সমস্যা হচ্ছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্তও বলছেন, ‘‘পারমিট থাকলেও অনেক অটোই গ্রামে যায় না। অটোগুলি যাতে গ্রামে যায় সে জন্য নজরদারি চালাব।’’
ভাদুতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, ‘‘কর্ণগড় এলাকার পড়ুয়ারা ঝুঁকি নিয়েই অটোতে যাতায়াত করে। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যার কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। ভাদুতলা মোড়ে দাঁডিয়ে আমরা বাসের চালকদের বহুবার বলেছি পড়ুয়াদের বাসে উঠতে দিন। তারপরেও কাজ হয়নি।’’ তিনি বলছেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে পরিবহণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আবেদন জানাব। ভাদুতলা মোড়ে স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করার কথাও বলব।’’
জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, ‘‘বাসে ছাত্রছাত্রীরা অবশ্যই যাতায়াত করতে পারবে। আগেও এ বিষয়ে বাস চালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবার সকলের সঙ্গে কথা বলব।’’