ঘাটাল ব্লক অফিসে আহত সিপিএম কর্মী কার্তিক বেরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
মার খেয়ে তৃণমূল কর্মীদের দিকে পাল্টা ধাওয়া করল বিজেপি। বুধবার নয়াগ্রামে এ দৃশ্য দেখেও ঘোর কাটছে না বিজেপি নেতাদের। সংগঠন তো যথেষ্ট মজবুত নয়। তা হলে এত কর্মী এলেন কোথা থেকে! খোঁজ নিয়ে জানা গেল শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। বিজেপির ভিড়ে আসলে মিশে ছিল তৃণমূলই।
মনোনয়ন ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষের গোলমালে উত্তাল হয়ে ওঠে নয়াগ্রাম ব্লকের সদর বালিগেড়িয়া এলাকা। পুলিশের সামনেই বিডিও অফিসের কাছে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল ইট-পাথর ছোড়াছুড়ি হয়। ইটের ঘায়ে জয়রাম টুডু নামে এক বিজেপির এক প্রস্তাবকের মাথা ও মুখ ফেটে যায়। তাঁকে গোপীবল্লভপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পাথর ছোড়াছুড়ির সময় কালীপদ কুইলা নামে এক পথচারী যুবকও জখম হন। বিজেপি কর্মীরা সংখ্যায় বেশি থাকায় রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে হয় তৃণমূলের লোকজনকে। এই ঘটনায় প্রকাশ্য এসেছে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূলের নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের সঙ্গে নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুর বিরোধ দীর্ঘদিনের। উজ্জ্বলবাবুর আসনটি এবার জনজাতি (এসটি) সংরক্ষিত। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী এ বার নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আসনটি মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত। ফলে, উজ্জ্বলবাবুর গোষ্ঠীর লোকজনই ভিড়ে মিশে ছিল কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শাসক শিবিরে। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপিকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শুনে উজ্জ্বলবাবুর প্রতিক্রিয়া, কে কী বলছেন আমার জানা নেই। আমাকে এসব জিগেস করবেন না।”
তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, “ভোটের মুখে আমাদের সম্পর্কে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মিথ্যা গল্প ফাঁদছে বিজেপি। দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।”
এ দিন মনোনয়ন পত্র জমা দিতে ঘাটাল ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন সিপিএমের স্বপন মাইতি, ঝন্টু ভুঁইয়া, কার্তিক বেরা- সহ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, মনোনয়ন পত্র জমা দিতে নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার সময়ই তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায়। লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছে। দাঁতনে পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার দায়িত্বে থাকা এক বিজেপি কর্মী মির রবিউলকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রবিউলের স্ত্রী সবেজান বিবি বিজেপি-র হয়ে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। খবর জানাজানি হতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রবিউলের বাড়িতে জনাকয়েক তৃণমূল কর্মী সমর্থক চড়াও হয়।
কেশপুরের জোড়াকেউদি গ্রামে প্রহৃত হয়েছেন বিজেপি কর্মী প্রদীপ কোলে। দতাল এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ মঙ্গলবার বিজেপির এক বৈঠকে গিয়েছিলেন। বাড়ির ফেরার পথে তাঁর উপর তৃণমূলের একদল লোক হামলা করে। নারায়ণগড় ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে আসার সময় অনুপ শ্যামল ও কালীপদ পাল নামের দুই সিপিএম কর্মীকে তৃণমূলের কয়েকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। পিংলার ব্লক অফিসে প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পিংলার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি রামপদ দে প্রার্থীদের নিয়ে বিডিও অফিসে মনোনয়ন তুলতে যান। সেই সময়ে বেশ কয়েকজন যুবক তাঁদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে কংগ্রেস।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ শাসকের বিরুদ্ধে। যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল।