সাত সকালে জলের ট্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়ে কলসি, বালতি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের মুখে অল্পবিস্তর চিন্তার ছাপ। আর হবে নাই বা কেন! গত কয়েক দিনে তাঁদের গ্রামে ডায়েরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে এক নাবালিকার। ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে গ্রামের ছ’টি নলকূপ। তাই স্থানীয় প্রশাসনের সরবরাহ করা পানীয় জলই এখন তাঁদের ভরসা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, খেজুরি-২ ব্লকের গোড়াহার জলপাই গ্রামে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছে। পানীয় জল নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন গ্রামবাসীরা। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে প্রশাসন। এ দিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ইঞ্জিন রিকশায় জলের ট্যাঙ্ক বসিয়ে ঘোরা হচ্ছে গোটা গ্রামে। নলকূপ সিল থাকায় গ্রামবাসীরা সেখান থেকেই পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি, এ দিন সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত পরিবারগুলিকে ২০ লিটার করে পানীয় জলের জারিকেন দেওয়া হয়।
কিন্তু এভাবে কত দিন? সেই প্রশ্ন গ্রামবাসীদের মধ্যে। গ্রামের পূর্বপল্লির বাসিন্দা জয়দেব পাত্র বলেন, “ বাড়ির পাশের নলকূপ সিল করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত পরিবারকে জল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক পরিবারে কেউ আক্রান্ত হননি। তাদেরও তো পানীয় জলের প্রয়োজন রয়েছে। নলকূপ সিল থাকায় সমস্যা হচ্ছে। শীঘ্রই ওই নলকূপ ঠিক করা হোক।’’
ব্লক প্রশাসন অবশ্য জানাচ্ছে, বুধবার থেকেই তমলুকের জনস্বাস্থ্য কারিগরি’র ‘রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই দফতরে’র লোকেরা এসে নলকুপগুলি শোধনের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, আগে এই কাজ করলে হয়তো গ্রামে এই পরিস্থিতি হতো না। এ ব্যাপারে খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডল বলেন, “আমরা পিএইচই’ বিভাগকে জানিয়েছিলাম। ওরা একটু আগে উদ্যোগী হলে ভাল হত।’’ পাশাপাশি, অসীমের এখন চিন্তা, ‘‘এতজন গ্রামবাসীকে আমরা জল দেব কোথা থেকে? এ দিন খেজুরি-১ ব্লকের কামারদা থেকে জল নিয়ে আসা হয়েছে। আরও আগে নলকূপগুলি শোধন করা উচিত ছিল।’’ বিডিও রমন সিংহ বিরদীও বলেন, “নলকূপগুলি শোধন করার বিষয়ে পিএইচই’র রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের প্রথমে হেলদোল ছিল না। ঘটনাটি জেলাশাসককে জানাই। তারপর এ দিন দফতরের লোকেরা এসে নলকুপগুলি শোধন করেছেন।’’ নলকূপ শোধনের দেরি প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন নতুন করে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়েছে কয়েকজন। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, শিশু-সহ এ দিন নতুন করে পাঁচজন অসুস্থ হয়েছেন। তাঁদের শিলাবেড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রের খবর, চিকিৎসাধীনদের মধ্যে রয়েছেন এক বছরের সায়ন জানা, দু’বছরের মধুমিতা জানা, ন’বছরের সৌমিতা জানা এবং ৬২ বছরের আঙুর মণ্ডল। গোড়াহার জলপাই গ্রামের মহেন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প। এ দিন সেখানে যান বিডিও রমন সিংহ বিরদী।
পাশাপাশি, ডায়েরিয়ায় মৃত মধুমিতা পাত্রের বাড়িতে এ দিন যান খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এবং স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। মৃতার বাবা নারায়ণ পাত্র এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। তাই প্রথমে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ওটাই ভুল হল।’’
এলাকার জলের পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ, বৃহস্পতিবার খড়্গপুর থেকে পিএইচই দফতর প্রয়োজনীয় জল নিয়ে আসছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। আগামী তিন দিন প্রায় ১৫০০ গ্রামবাসীকে সেই জল সরবরাহ করা হবে।