মেদিনীপুরে অনির্বাণ। নিজস্ব চিত্র
উপচে পড়া প্রেক্ষাগৃহ। উপস্থিত দর্শকদের তরফে একটাই অনুরোধ— কিছু বলতে হবে তাঁকে। অনুরোধ পেয়ে মুচকি হেসে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমি আর কী বলব? এটা তো আমার পাড়া।’’ সঙ্গে আরও জুড়লেন, ‘‘আমি তো এখানেই থাকি। বড়ও হয়েছি এখানে।’’ অভিনেতার মুখে এমন কথা শুনে প্রেক্ষাগৃহে তখন করতালির ঝড়।
চিত্রটা মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোত স্মৃতি সদনের। রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে মঞ্চস্থ হয়েছে কলকাতার ‘পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ’র প্রযোজিত নাটক ‘অদ্য শেষ রজনী’। পরিচালনায় ব্রাত্য বসু। অভিনয়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দেবযানী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ব্যবস্থাপনায় শহরের রামকৃষ্ণনগর উন্নয়ন সমিতি। প্রসঙ্গত, বছর তিনেক আগেই মেদিনীপুরে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। সমিতির তরফে তা ঘোষণাও হয়েছিল। অতিমারির জেরে তা স্থগিত হয়। করোনা-পর্ব কাটিয়ে ওঠার পরে শহরের মঞ্চে মঞ্চস্থ হল নাটকটি। নাটক শেষে উদ্যোগী সমিতির তরফে সংবর্ধিত করা হয়েছে অনির্বাণকে। সব মিলিয়ে শহর মেদিনীপুর দেখল এক স্মৃতিকাতর অনির্বাণকে!
অনির্বাণ বলছিলেন, ‘‘যেটাকে কালচারাল এক্সপোজার বলে, সংস্কৃতির সঙ্গে আমার যে পরিচয়, সেটা গান হোক, নাচ হোক, নাটক হোক, যাই হোক না কেন, সেটা আমার এখানেই। এই অডিটোরিয়াম থেকেই।’’ কথা প্রসঙ্গে অনির্বাণ ফিরে গিয়েছিলেন কৈশোর বেলায়। তিনি বলছিলেন, ‘‘স্বাভাবিক ভাবেই এই অডিটোরিয়াম তখন এ রকম ছিল না। খানিকটা অন্য রকম ছিল এই জেলা পরিষদ হল। আমি কত গান শুনেছি, অনুষ্ঠান দেখেছি এখানে। মেদিনীপুরের এই মঞ্চে আমি এর আগেও অভিনয় করেছি। এখানে অভিনয় করা সব সময়েই স্পেশাল আমার কাছে।’’
মেদিনীপুরে ছিল এই নাটকের ৭৪তম মঞ্চায়ন। ২০১৬ সালে নাটকটির মঞ্চায়ন শুরু। জানা গিয়েছে, ক’দিন পরেই কলকাতার পাইকপাড়ায় ৭৫তম মঞ্চায়ন হবে। এরপরই নাটকটির ইতি, এটির মঞ্চায়ন হবে না। মঞ্চ নির্মাণে ট্রামের আদল ছিল। দর্শকদের মতে, মঞ্চ নির্মাণে ট্রামটির নানা ব্যবহার চমৎকার ভাবে হয়েছে। রবিবার দর্শকদের ভিড়ে ছিলেন আলোকবরণ মাইতি, সুমন্ত সাহা, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়রা। সঙ্গীতশিল্পী তথা নাট্যপ্রেমী আলোকবরণ বলছিলেন, ‘‘আমি কলকাতায় গিয়েও এই নাটকটি দেখে এসেছি। মেদিনীপুরের মঞ্চে ওঁকে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। অনির্বাণ নানান মেজাজ, চরিত্র এত সুন্দর করে আলাদা করতে পারেন। সব চরিত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে নাটকের মধ্যে, নাটকের দৃশ্যে।’’