বাবা নিজের জমিজমা তিন ছেলেকে ভাগ করে রেজিস্ট্রি করেছিলেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডের নথিতে বাদ পড়েছিলেন খোদ বড় ছেলে। ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসে গিয়ে নথি সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন বড় ছেলে চন্দন। অভিযোগ, সেই কাজ করে দেওয়ার জন্য দফতরের আপার–ডিভিশন ক্লার্ক সুদর্শন সাউ ঘুষ চেয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা!
আর ওই টাকা নেওয়ার সময় সুদর্শন সাউকে হাতেনাতে পাকড়াও করল রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অধিকারিক দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুদর্শনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। নন্দকুমারের ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরুণকুমার রায় বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনেছি । উনি আমাদের ক্যাশে কাজ করেন। উনি অফিসের বাইরে কী করেছেন জানি না। এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দকুমারের মহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা চন্দন প্রধান পেশায় দিনমজুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। চন্দনবাবুর বাবা ২০০৫ সালে তিন ছেলের নামে বসতবাড়ির প্রায় ৭ ডেসিমেল জমি সমানভাগে দানপত্র করে দেন। ব্লক ভূমি সংস্কার দফতর থেকে ওই জমির মিউটেশন করার পর ‘রেকর্ড’ প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি চন্দনবাবু জানতে পারেন জমি নথিভুক্ত হলেও তাঁর নাম বাদ পড়েছে। নাম তোলার জন্য ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী সুদর্শন সাউ ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। টাকা না পেলে কাজ হবে না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এরপরই দুর্নীতি দমন শাখায় সুদর্শনবাবুর বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ জানান চন্দনবাবু। সুদর্শনবাবুর দাবি মতো তাঁকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে মঙ্গলবার প্রথম দফায় ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানান চন্দন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চন্দনের বাড়িতে ওই টাকা নিতে এসেছিলেন শ্রীধরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শনবাবু। টাকা নেওয়ার সময় দুর্নীতি দমন শাখার দল সেখানে হানা দিয়ে সুদর্শনবাবুকে গ্রেফতার করে।
চন্দনের অভিযোগ, ‘‘আর্থিকভাবে সচ্ছল নই। সুদর্শনবাবু আমার অবস্থা জেনেও এত টাকা ঘুষ চাইবেন ভাবতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম।’’ শ্রীধরপুর গ্রামে সুদর্শনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরও প্রথমে কেউ সাড়া দেননি। পরে ছেলে ভিতর থেকে শুধু বলেন, ‘‘আমাদের কিছু বলার নেই।’’