বিক্ষোভে পুড়ল কুশপুতুল। —নিজস্ব চিত্র।
ফের বেআব্রু হল বিজেপির দলীয় কোন্দল। মঙ্গলবার খড়্গপুরে পুরভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে গোলবাজার ভাণ্ডারিচকে বিক্ষোভ দেখাল দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে বিজেপিতে সদ্য আসা কর্মীদের প্রার্থী পদ দেওয়া হয়েছে। এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। পুরভোটের আগে দলীয় কোন্দলে রাশ টানতে না পেরে অস্বস্তিতে দলীয় নেতৃত্ব। এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে বিজেপি প্রার্থী শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা নায়ডু পুলিশি হয়রানির অভিযোগে সরব হন। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের একটি বোমাবাজির ঘটনায় শ্রীনু নায়ডুর নামে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে।
দলের এক সূত্রে খবর, বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রেমচাঁদ ঝার কোন্দলের জেরেই বারবার এই ঘটনা ঘটছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, জেলা সভাপতি বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থী পদের জন্য প্রস্তাব পাঠালেও শহর সভাপতির সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্ব যোগসাজশ করে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী তালিকা পুনর্বিন্যাস করেছে।
এ দিন নিজেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করে নটরাজ ঘোষালের অভিযোগ, “বিজেপির জন্মলগ্ন থেকে আন্তরিক ভাবে তাঁরা দলের কাজ করছেন। অথচ অজয় চট্টোপাধ্যায়ের মতো পুরনো নেতাকেও প্রার্থী করা হয়নি। জেলা নয়, এ সব ঘটনা শহর কমিটির চক্রান্তে হয়েছে।” তাঁর হুঁশিয়ারি, তাঁরা এই প্রার্থী তালিকা মানছেন না। তাই ৩৫টি ওয়ার্ড থেকে তাঁরা নির্দল প্রার্থী দেবেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রেমচাঁদ ঝাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ দিন বিক্ষোভকারীরা তুষার মুখোপাধ্যায় জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারী কৃষ্ণা কুমার, রাজেশকুমার শর্মারা বলেন, “আমরা দল ছেড়ে যাচ্ছি না। দলে থেকেই আবর্জনা পরিষ্কার করতে চাই।” এ দিন বিক্ষোভের পরে প্রেমচাঁদ ঝা দাবি করেন, তিনি যদি টাকা নিয়ে থাকেন, তবে তার প্রমাণ দিতে হবে। তিনি বলেন, “যাঁরা দলবিরোধী এ সব কাজ করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তুষারদাও এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন।”
যদিও এ দিন তুষারবাবু বলেন, “যাঁরা দলের নাম ব্যবহার করে দলের রাজ্য নেতাদের অপমান করছে, তাঁদের চিহ্নিত করা শুরু হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “এই আন্দোলনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছায়া দেখতে পাচ্ছি।” বিক্ষোভকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ দিন মনোনয়ন পেশ করতে এসে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তোলেন শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী পূজা নায়ডু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে রেলশহরের কুমোরপাড়া এলাকায় একটি বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় শ্রীনু নায়ডুর নাম জড়ায়। সোমবার রাতে শ্রীনু নায়ডুর খোঁজে নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় টাউন পুলিশ। পূজাদেবীর অভিযোগ, “পুলিশ রাতে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ঢুকেও তল্লাশি চালায়। শ্রীনু দিল্লিতে আছে জেনেও তল্লাশি চলায় পুলিশ। শাসকদলের চাপেই পুলিশ এই
কাজ করছে।”
পূজা নায়ডুর দাবি, কুমোরপাড়া এলাকায় বোমাবাজির দিন থেকেই তাঁর স্বামী দিল্লিতে রয়েছেন। পুলিশকে তিনি সেই প্রমাণও দিয়েছেন। তারপরও রাতে বাড়িতে ঢুকে পুলিশ তাঁদের হয়রান করেছে। তাঁর অভিযোগ, “ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। তাই শ্রীনুকে ফাঁসিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এ দিন ফোনে শ্রীনু নায়ডু দাবি করেন, কোন ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তা তিনিই জানেন না। আসলে তাঁকে টাকা দিয়ে দেবাশিস চৌধুরী কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দুর্নীতিপরায়ন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠন করেছেন। তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসাতে পুলিশের সাহায্য নিচ্ছে তৃণমূল।” তুষারবাবুও বলেন, “এ ভাবে বিজেপিকে রোখা যাবে না। প্রয়োজনে আমরা ভবিষ্যতে পথে নামব।” যদিও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “বিজেপি হারবে বলে এখন এ সব কথা বলছে। আর যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের সম্পর্কে খড়্গপুরের মানুষ সব জানে। এই সব লোকেরাই এখন বিজেপির শক্তি।”