সিপিএমের স্থানীয়স্তরের সম্মেলন স্থানান্তর হয়েছিল, ‘গোপনে’ হয়েছিল। —প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যে পালাবদলের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে বহু জায়গায় সিপিএমের স্থানীয়স্তরের সম্মেলন স্থানান্তর হয়েছিল, ‘গোপনে’ হয়েছিল। যেমন কেশপুরের সম্মেলন হয়েছিল মেদিনীপুরে। এর জন্য সিপিএম নেতৃত্ব দায়ী করেছিলেন ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’কে।
এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। এখন সিপিএমের এরিয়া কমিটিস্তরের সম্মেলন চলছে। এ বার কোথাও সম্মেলন স্থানান্তর করতে হয়নি। সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক বিজয় পাল মানছেন, ‘‘এরিয়া কমিটির সম্মেলন শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনওটাই এলাকার বাইরে হয়নি।’’
আগে সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে দু’টি কমিটি ছিল— লোকাল এবং জোনাল। এখন মাঝে শুধু এরিয়া কমিটি রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের এরিয়া কমিটি রয়েছে ৫১টি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৬টি কমিটির সম্মেলন হয়েছে একেবারে নিশ্চিন্তেই। বিজয় বলছেন, ‘‘ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি এরিয়া কমিটির সম্মেলন হয়ে গিয়েছে।’’
একাধিক মহলের ব্যাখ্যা, একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের ‘আক্রমণ’ ভোঁতা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় শাসক দল নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। ফলে, সিপিএম তাদের স্থানীয়স্তরের কমিটির সম্মেলন নির্বিঘ্নে এলাকাতেই করতে পারছে। যেমন কেশপুরে নির্বিঘ্নেই এরিয়া কমিটিস্তরের সম্মেলন সেরে ফেলেছে সিপিএম। এখানে সিপিএমের তিনটি এরিয়া কমিটি রয়েছে।
১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন নিয়ামত হোসেন। ২ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন হরিপদ হেমব্রম, ৩ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন শুভাশিস পাইন। উল্লেখ্য, কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক শিউলি সাহার অনুগামীদের সঙ্গে দলের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজার অনুগামীদের দ্বন্দ্ব মাথাচাড়াও দিয়েছে।
শুধু কেশপুর নয়, বেশিরভাগ এলাকাতেই এরিয়া কমিটির সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হচ্ছেন। নবীনরা দায়িত্ব নিতে চাইছেন না, না প্রবীণরা দায়িত্ব ছাড়তে চাইছেন না? সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, অনেক এলাকাতেই ‘নতুন মুখ’ আসছে। যেমন মেদিনীপুর সদর পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক ছিলেন সলমা মান্ডি। এ বার সম্পাদক হয়েছেন গৌরাঙ্গসুন্দর কৈল্যা।
নিশ্চিন্তে সম্মেলন সারলেও সিপিএমের ‘রক্তক্ষরণ’ বন্ধ হচ্ছে না কেন, সে নিয়ে চর্চা রয়েছে দলের বাইরে, ভিতরেও। সদ্য অনুষ্ঠিত মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনেও ছিল একই বিপর্যয়ের ছবি। এ বার উপনির্বাচনে তারা পেয়েছে ৫.৫১ শতাংশ ভোট। আর ২০২৪ এর লোকসভায় তারা পেয়েছিল ৩.৯০ শতাংশ ভোট। দুর্বলতার কথা মানছেন বাম নেতৃত্বও। এ নিয়ে সম্মেলনে চর্চা হচ্ছে বলেও খবর। উল্লেখ্য, সিপিএমের জেলা সম্মেলন হবে খড়্গপুরে। আগামী ১২-১৩ জানুয়ারি।
বিজেপির দাবি, সিপিএমকে ‘জমি’ পাইয়ে দিচ্ছে তৃণমূলই। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘‘তৃণমূলের লোকেরাই এখন সিপিএমের ঝান্ডা লাগাচ্ছে! যে কোমায় চলে গিয়েছে, তাকে স্যালাইন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে! তবে এ সবে লাভ হবে না। লোকে যাদের রিজেক্ট করেছে, তাদের প্রোজেক্ট করে লাভ হবে না।’’
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান দীনেন রায় পাল্টা বলেন, ‘‘বামের ভোট রামে যাওতেই বিজেপি বেড়েছিল। আর সিপিএম তো শূন্য থেকে মহাশূন্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে!’’ দীনেনের মতে, ‘‘আগে কেন ওরা (সিপিএম) সম্মেলন করতে পারেনি, এখন কেন পারছে, সেটা পুরোটাই ওদের ব্যাপার।’’
এ ক্ষেত্রে জেলা সিপিএমের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘নানা কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল কার্যত দিশাহারা। আমাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে এই পরিবেশকে কাজে লাগাতে হবে।’’
দলের নবনির্বাচিত এক এরিয়া কমিটির সম্পাদকের মতে, ‘‘তৃণমূল-বিরোধী পরিবেশ কাজে লাগাতে না পারলে পালের হাওয়া বিজেপিই কেড়ে নেবে।’’