হুঁশিয়ার: নদীর তীরে বসেছে সতর্কবার্তার বোর্ড। নিজস্ব চিত্র
ন’মাসে চার জন!
গড়বেতার জনপ্রিয় পর্যটনস্থল গনগনিতে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পর্যটন কেন্দ্রে সাজিয়ে তোলায় প্রস্তাব গিয়েছে, সেখানে একের পর এক মৃত্যু ভাবাচ্ছে প্রশাসনকেও। শিলাবতী নদীর তীরবর্তী এলাকাটিতে কীভাবে আরও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা যায় তা খতিয়ে দেখছে ব্লক প্রশাসন।
রবিবার গনগনিতে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসে শিলাবতীতে ডুবেই মৃত্যু হয় হুগলির হরিপালের যুবক সায়ন্তন দেববর্মনের। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মার মূর্তি বিসর্জনে নেমে শিলাবতীর জলে তলিয়ে গিয়েছিলেন বেসরকারি আইটিআই কলেজের দুই ছাত্র শঙ্কর ঘটক ও আকাশদীপ পাণ্ডে। একদিন পরে শঙ্করের দেহ উদ্ধার হলেও আকাশদীপকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই ঘটনার পর গনগনির কয়েকটি স্থানে জেলা পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হোর্ডিং লাগানো হয় হয়। নজরদারিতে মোতায়েন করা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার। তবু এড়ানো যায়নি মৃত্যু। গত ১০ মে গড়বেতার ১১ বছরের কিশোরী সোনালি গরাই গনগনিতে বেড়াতে এসে নদীতে তলিয়ে যায়। রবিবার ফের আরেকটি মৃত্যু।
রবিবারের ঘটনার পরে যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ, গড়বেতা থানার ওসি প্রশান্ত পাঠক-সহ পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা গনগনির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। যুগ্ম বিডিও বলেন, ‘‘গনগনিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। তবু এতবড় এলাকা। তাই নজর এড়িয়ে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বিপদ ডেকে আনেন। আমরা আরও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করছি।’’ ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার থেকে গনগনির বিভিন্ন স্পটে সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য আরও বেশি সংখ্যক সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে। সেই সঙ্গে কাজুবাদামের জঙ্গল ও খাদের নীচে নদী সংলগ্ন এলাকায় নজরদারিতে মোতায়েন করা হবে সাদা পোশাকের পুলিশ। তৈরি হবে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার। বিস্তীর্ণ গনগনিতে ঘুরে ঘুরে নজর রাখবেন পঞ্চায়েতের কাজে যুক্ত কর্মীরাও। সব মিলিয়ে মৃত্যু মিছিল ঠেকাতে ‘বজ্র আঁটুনি’ ব্যবস্থা নিচ্ছে গড়বেতা ১ ব্লক প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, শিলাবতীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালি তোলার ফলে জলের স্রোতের গতিপথ পাল্টাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যতটা সাবধানতা নেওয়া দরকার তা না নিয়েই জলে নেমে পড়ছেন অনেকেই। তাছাড়া পর্যটকরা গনগনিতে এসে নিষেধ ভুলে নেশাগ্রস্ত হয়ে শিলাবতীর জলে নেমে বিপদে পড়ছেন। রবিবারের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তেও পুলিশ জানতে পেরেছে, মদ্যপ অবস্থাতেই সায়ন্তন নদীতে নেমেছিলেন। এ সব আটকাতে জেলা পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন বোর্ড টাঙিয়ে জানান দিয়েছে,
গনগনিতে মদ্যপান বা নেশার দ্রব্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা না মানায় দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। এ বার তাই নজরদারিই ভরসা।