Liqour: সাঁড়াশি অভিযানের সঙ্গে কাজের আশ্বাসও

চোলাই কারবারে রাশ সেই ছবিটাই বদলে দিয়েছে। ঘাটালের হরিশপুরে সামুই হালে, মনসুকার বরকতিপুরে আড়ালে মদ তৈরি হচ্ছে। বাইরে থেকে এনেও বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩০
Share:

পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে চোলাই তৈরির সামগ্রী। ঘাটালে। ফাইল চিত্র।

আগেও অভিযান হত। চলত ধরপাকড়। এখনও হচ্ছে। তবে চোখে পড়ার মতো তফাত হল, আগে অভিযানের পরেও চলত চোলাইয়ের কারবার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অভিযানের জেরে প্রকাশ্যে সেই কারবার অনেকটা কমেছে। বহু গ্রামে চোলাই তৈরি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঘাটাল ব্লক-সহ মহকুমার একাংশে প্রায় দু’দশক ধরে বহু চেষ্টা করেও যে কারবার রোখা যায়নি তা এখন সম্ভব হল কী করে? এই সাফল্যের অন্যতম কারণ হল দফতরের মধ্যে সমন্বয় তৈরি আর বিকল্প কর্মসংস্থানের আশ্বাস।

চোলাইয়ের রমরমা ঠেকাতে বেশ কয়েকমাস ধরে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন, মহকুমা পুলিশ এবং আবগারি— তিন দফতর একসঙ্গে মিলে অভিযান চালায়। এতে ফাঁক গলে পার পেয়ে যাওয়া কঠিন হয়েছে। আবার ঠেক ভাঙা, চোলাই নষ্ট, উপকরণ বাজেয়াপ্ত, কারবারিদের গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানোর কাজও গতি পেয়েছে। অভিযান হয়েছে নিয়মিত। আগে অবশ্য পুলিশ বা আবগারি দফতর বিক্ষিপ্ত ভাবে অভিযান চালাত। ফলে দু’-চার দিন পরেই নতুন ঠেক তৈরি করে শুরু হত কারবার।

Advertisement

আর এখন? ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর সুহৃদ রায় বলছিলেন, “ টানা অভিযান চলছে। বেশিরভাগ এলাকায় চোলাই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” ঘাটালের হরিশপুর, মনসুকা, ইড়পালার গ্রামগুলি ঘুরেও দেখা গেল, সেখানে চোলাই তৈরি পুরোপুরি বন্ধ। কারবারের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা যে যার বাড়ির কাজে ব্যস্ত। চোলাই তৈরির উনুন ভাঙা। প্লাস্টিকের খালি ব্যারেল গাছের ডালে ঝুলছে। ঘাটালের মনোহরপুরে-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রথম চোলাই কারবার বন্ধ হয়েছিল। সেখানেও আর তা মাথা চাড়া দেয়নি।

ঘাটালে চোলাইয়ের কারবার বহুদিনের। নগদ টাকায় কিছু মানুষ ফুলেফেঁপেও উঠেছে। ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনা থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে চোলাই তৈরি হত, প্রকাশ্যেই চলত বিক্রিবাঁটা। চোলাই এমনিতেই ক্ষতিকারক। আর মদ তৈরির পরিবেশ হল নোংরা-জঞ্জালে ভর্তি। ইদানীং আবার এর খদ্দের বাড়াতে মেশানো হচ্ছিল নানা রকমের রাসয়নিক। ইউরিয়া, পিরিডিন থেকে মিথানলও। যা শরীরে গেলেই বিপদ। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, লিভার, চোখ নষ্ট হওয়া, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া— রয়েছে নানা আশঙ্কা। ঘাটাল, দাসপুরে মদের নেশায় কম বয়সে মৃত্যুর ঘটনাও ভুরি ভুরি রয়েছে। অথচ এই মারণ কারবার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছিল না। সকালে কাজে যাওয়ার আগে ঠেকে গিয়ে চোলাই খাওয়া, নেশায় বুঁদ হয়ে পড়া লোকজন বহু। কাজে না গি।ে খালি হাতে ঘরে ফেরা আর তারজেরে নিত্য অশান্তি এতদিন লেগেই ছিল।

চোলাই কারবারে রাশ সেই ছবিটাই বদলে দিয়েছে। ঘাটালের হরিশপুরে সামুই হালে, মনসুকার বরকতিপুরে আড়ালে মদ তৈরি হচ্ছে। বাইরে থেকে এনেও বিক্রি হচ্ছে। ইড়পালাতেও তৈরি হচ্ছে চোলাই।তবে এই কারবারে যুক্তেরা মানছেন, আগের সঙ্গে কারবারের রমরমা কমেছে। একসময় ঘাটালের গ্রামে গ্রামে চোলাই কারবার বন্ধ করতে তৈরি হয়েছিল প্রমীলা বাহিনী। অশান্তি এবং মৃত্যুমিছিল ঠেকাতে ঘর থেকে বেরিয়ে মনসুকা, গোপমহল, মনোহরপুর, প্রতাপপুর, ইড়পালা,কুঠিঘাট, হরিশপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামের মহিলা মিছিল করতেন। ঠেক ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতেন। এখন কিছুটা সাফল্য আসায় খুশি তাঁরাও।

চোলাই কারবারে রাশ টানা সফল হওয়ার একটা কারণ যদি হয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়, তবে অন্য কারণ হল বিকল্প কাজের আশ্বাস। হরিশপুরের রাত্রি দোলই বলছিলেন, “কিছুদিন আগে মদ তৈরির গুড়ের বস্তা ঘাড়ে পড়ে আমার স্বামী মারা গিয়েছে। আমি তবু ব্যবসা করছিলাম। পুলিশ, এসডিও সাহেবরা বন্ধ করতে বলেছেন। আমাদের অন্য ব্যবসা করে দেবেও বলেছেন।” কিন্তু দ্রুত বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে ভাবনা থাকছে। ঊর্মিলা দোলই, নমিতা দোলই, রীতা হাজরাদের হুঁশিয়ারি, “নগদ টাকার কারবার ছেড়ে ঘরে চুপচাপ বসে আছি। বিকল্প ব্যবসা করে না দিলে আবারও চোলাই কারবার শুরু করব।”

প্রশাসন অবশ্য কড়া। ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নিশ্বর জানাচ্ছেন, গত দু’-তিন মাসে ধারাবাহিক অভিযান চলেছে ও মামলা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছে। মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসের আশ্বাস, “ঘাটালে কোথাও চোলাই মদ তৈরি এবং বিক্রি কোনওটাই হবে না। পুলিশ, আবগারি,পঞ্চায়েত, গ্রামের মানুষদের নিয়ে অভিযান করে মহকুমা জুড়ে চোলাই উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। ওই কারবারে জড়িতদের বিকল্প আয়ের সংস্থানেও পদক্ষেপ করা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement