দাসপুরে একটি দোকালে প্রকাশ্যেই অ্যাসিডের বোতল বের করে দিচ্ছেন কর্মচারী।
দোকানে বসানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সেখানেই অবাধে বিকোচ্ছে অ্যাসিড। লাইসেন্স তো নেই-ই। মানা হয়নি অ্যাসিড বিক্রির সরকারি নিয়মকানুনও।
চলতি বছরের জুন মাসেও দাসপুরের সাগরপুরে একাধিক দোকানে গিয়ে ঠিক এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সোনা-রুপোর গয়না তৈরির নানা যন্ত্রাংশ কিনতে গিয়ে রিঠা, কাতুড়ি, চিমটে কেনার পর অ্যাসিড পেতেও অসুবিধা হয়নি। একবার চাইতেই হাতে এসেছিল সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড। শুক্রবার সকালেও ক্রেতা হিসাবে দাসপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি দোকানে গিয়ে অ্যাসিডের কথা বলতেই হাতে এল দু-দু’টি বোতল।
তবে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ক’টা প্রশ্ন করতেই ধেয়ে এল পাল্টা প্রশ্ন— “এই সব দেখার কাজ পুলিশ-প্রশাসনের। আপনাদের তো নয়!” যদিও পরক্ষণেই দোকান মালিক বরুণ মল্লিক সামলে নিলেন নিজেকে, “এতসব নিয়মকানুন জানা নেই। ঠিক আছে আর বিক্রি করব না। লাইসেন্সের নিয়ে নেব।’’
অ্যাসিড বিক্রির জন্য অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘাটাল শহর, দাসপুর, সাগরপুর, চাঁইপাট, গোপীগঞ্জ-সহ মহকুমার সর্বত্র প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় অ্যাসিড। বিয়ারের খালি বোতলে অ্যাসিড রাখা থাকে প্রকাশ্যে। গয়না তৈরির যন্ত্রাংশ কেনার পর ওই বিয়ারের বোতল কাগজে মুড়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দেন দোকানদার। আনন্দবাজারের এই অন্তর্তদন্তের কথা জানাজানি হতেই বরুণবাবু ফোন করে ডাকলেন দাসপুর স্থায়ী ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কর্মকর্তাদের। সমিতির সভাপতি অনুপ কুমার মণ্ডল এবং সম্পাদক শিশির মাঝি দু’জনেই অবশ্য স্বীকার করলেন, এটা অন্যায়। অনুপবাবুর আশ্বাস, ‘‘দ্রুত সমিতির বৈঠক ডাকব। আমরা কড়া নজর রাখব লাইসেন্স ছাড়া যাতে অ্যাসিড বিক্রি না হয়।’’
এই দাসপুরেই একাধিক বার অ্যাসিড হানার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, এমন ঘটনার পরে সংবদমাধ্যমে তা নিয়ে চর্চা শুরু হলে কিছুদিন প্রকাশ্য বিক্রি বন্ধ হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই ফের মুছে যায় আবডাল। এমনকী দোকানে বসানো সিসি ক্যামেরায় উঠে যায় অ্যাসিড বিক্রির ছবি।
তাতে কী? এক দোকান মালিক বলেই ফেললেন, ‘‘প্রশাসন সবই জানে। দাসপুরে অ্যাসিড হামলার পর অভিযানও হয়েছিল। তারপরই শুরু হয় মাসোহারা প্রথা। দিব্যি চলছে ব্যবসা।’’ সাগরপুরের এক দোকান মালিকের আবার কটাক্ষ, ‘‘আপনারা কাগজে লিখবেন? তাতে প্রশাসনেরই তো লাভ! আমাদের মাসোহারা বাবদ টাকার অঙ্ক বাড়বে।’’ সাগরপুর পল্লি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বলরাম হাইত অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও সাগরপুর বাজারে অ্যাসিড বিক্রি হয়। তবে অনেক দোকানদারই এখন ক্রেতার সচিত্র পরিচয় পত্র চাইছেন।’’
কিন্তু লাইসেন্স ছাড়া অ্যাসিড বিক্রিই যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে ক্রেতার পরিচয় পত্র নিয়ে কী হবে? বলরামবাবু সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে বিশ্বজিৎ মাইতি নামে এক দোকান মালিক বললেন, ‘‘আমরা পরিচয় পত্র নিয়েই বিক্রি করছি। এ বার ওই অ্যাসিড নিয়ে তিনি কী করবেন না-করবেন, তার দায়িত্ব আমাদের নয়।’’
কড়া আইন থাকলেও অ্যাসিড বিক্রি ও ব্যবহার কেন বন্ধ করতে পারছে না প্রশাসন? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক জগদীশ প্রসাদ মিনার দাবি, “এ বার কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। নিয়ম না মেনে অ্যাসিড বিক্রি ও ব্যবহার করলেই আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” ছবি: কৌশিক সাঁতরা।