ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠকে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলে উত্তাপ ছড়াচ্ছে জাতিসত্তার আন্দোলন। এমন আবহে দলকে মজবুত করতে জেলা সম্মেলন করবে তৃণমূল। বুধবার ঝাড়গ্রামে এসে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে এমনই নিদান দিয়ে গেলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক।
সম্প্রতি তৃণমূলের শীর্ষস্তর থেকে আইনমন্ত্রী মলয়কে ঝাড়গ্রাম জেলার সংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দিন দলের সাংগঠনিক বৈঠকে নিজেই সে কথা জানান মলয়। দলের জেলা, বিভিন্ন ব্লক-সহ সব স্তরের নেতা-নেত্রী ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। মলয় জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ভোটের টিকিটের জন্য ঘোরাঘুরি না করে দলকে পোক্ত করতে হবে। দল থাকলে তবেই নেতা-নেত্রীরা থাকবেন।
বস্তুতপক্ষে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে যেভাবে জাতিসত্তার আন্দোলন মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাতে চিন্তিত তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কুড়মি সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি, কুড়মি গ্রামে রাজনৈতিক প্রচার, ভোটের দেওয়াল লিখন করতে দেওয়া হবে না। সূত্রের খবর, এমন আবহে পাল্টা কৌশল নিচ্ছে শাসকদলও। বুথ থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত সাংগঠনিক সভা ডেকে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হবে, তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে অব্যাহত থাকবে বিভিন্ন পরিষেবা। মহিলারা পাবেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা।
এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরায় একটি অতিথিশালায় তৃণমূলের ওই সাংগঠনিক সভায় ব্লক সভাপতিদের কাছ থেকে এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতির তথ্য চান মন্ত্রী। কোথায় কোথায় সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে, কোন কোন বিষয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে, সেগুলি পর্যালোচনা করে দেখতে বলেন মলয়। বৈঠকে মলয়ের বার্তা, ‘‘কাউকে টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে আগাম কথা দেবেন না। পর্যালোচনা করে টিকিট দেবে দল। বিরোধীদের খাটো করে দেখা চলবে না। শত্রুদের দুর্বল ভাবাটা ভুল।’’ নতুন প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে থেকে সুবক্তাদের তুলে আনার কথা বলেন মন্ত্রী। ভোটের স্বার্থে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একযোগে চলার বার্তাও দেন।
এ দিন দলকে মজবুত করতে মলয় সাংগঠনিক বৈঠক করতে এলেও জেলার চার বিধায়কের মধ্যে গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাতো ও বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা আসেননি। দেবনাথ বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। আর খগেন্দ্রনাথ অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকায় আসেননি। ৮টি ব্লকের মধ্যে ৭ জন ব্লক সভাপতি এসেছিলেন। জামবনি ব্লক সভাপতি মধুসূদন মুর্মু অসুস্থতার জন্য আসেননি। এ দিন জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু, জেলা চেয়ারপার্সন বিরবাহা সরেন টুডু, প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রবিন টুডুর বক্তব্য শোনেন আইনমন্ত্রী।
এ দিন বৈঠকের বিষয়ে মলয় কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীকে জেলার সংগঠন দেখতে বলেছেন দলনেত্রী। তাই মলয়বাবু এসে আমাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। গরম একটু কমলে জেলা সম্মেলন করার কথা বলেছেন মলয়বাবু। আগামী ২৮ এপ্রিল জেলা কমিটির বৈঠকে জেলা সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’